স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের এক অনবদ্য ক্রিকেটারের নাম সাকিব আল হাসান। যেকোন পরিস্থিতিতে দলকে জিতিয়ে আনতে যার কোন তুলনা হয় না। এই মুহুর্তে সাকিব ইস্যুতে আবারো উত্তপ্ত দেশের ক্রিকেট পাড়া। এদিকে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিজে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন এক রকম। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া নিয়ে এই মহাতারকা বললেন অন্য রকম। তা নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মাসুদ পারভেজকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে
প্রশ্ন : সাকিব আল হাসানের দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়টি দেখছি শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ! নাজমুল হাসান : তাইতো দেখছি। গত রাতে (পরশু) হঠাৎ করে জালাল ভাইয়ের (ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস) ফোন। উনি তখন কোনো একটি দাওয়াতে ছিলেন। সেখান থেকেই বললেন, সাকিব নাকি ওনাকে ফোন করে বলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবে না। আমি তো শুনে থ!
প্রশ্ন : চট্টগ্রামে আপনার সঙ্গে কথা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরও এ রকম শোনাটা কতটা বিব্রতকর? নাজমুল : ওর সঙ্গে এর আগেও যেসব কথা হয়েছে, তা-ও আপনাদের বলেছি। লম্বা সময় টেস্ট খেলবে না বলে চিঠি দেওয়ার পর ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তখন বলল, দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবে না। কারণ তখন আইপিএল আছে। আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে না চাইলে যেও না। কিন্তু দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ। ’ আইপিএলে দল পায়নি যেহেতু, এরপর চট্টগ্রামে (আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষে) কথা বলে নিশ্চিত করলাম, দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্টও খেলবে। ও নিজে যখন বলেছে খেলব, তখন ওকে তো আমার বাদ দেওয়ার পথ নেই। স্কোয়াডও ঘোষণা করা হলো ওকে রেখেই। খেলতে না চাইলে তখনই আমাকে বলে দিত যে খেলবে না। এখন এত নাটক কেন? বলছে মানসিকভাবে নাকি বিপর্যস্ত। আমার প্রশ্ন হলো, আইপিএলে দল পেলেও কি একই কথা বলত?
প্রশ্ন : এখন তাহলে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন? নাজমুল : জালাল ভাইকে বলে দিয়েছি, এখন আর মুখের কথা বা টেলিফোনে কাজ হবে না। লিখিত দিতে হবে। মুখে তো চট্টগ্রামেও আমাকে খেলবে বলেছিল। আগে লিখিত দিক যে কোনটা খেলবে বা খেলবে না। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তবে এটা বলতে পারি যে আমি ভীষণ বিরক্ত। সাকিব একা নয়, আরো অনেকেই একই কাজ করেছে।
প্রশ্ন : কাদের কথা বলছেন? নাজমুল : কথা নেই, বার্তা নেই, হুট করে এসে তামিম বলে দিল সে টি-টোয়েন্টি খেলবে না। গত বছর জিম্বাবুয়ে সফরের আগে আমার সোর্স জানাল, ‘রিয়াদ কিন্তু ওখানে গিয়ে অঘটন একটা ঘটাবে। ’ সঙ্গে সঙ্গেই আমি ওকে ডাকলাম। এসে আমাকে বলে গেল যে সে টেস্ট খেলবেই। অথচ জিম্বাবুয়েতে গিয়ে সেঞ্চুরি করেই অবসর নিল। আমার কথা হলো, কেউ যদি খেলতে না চাও, কোনো অসুবিধা নেই। আগেভাগে জানিয়ে দাও। হুট করে এসব বলে দলকে, দেশকে বিপদে ফেলবে কেন?
প্রশ্ন : সাকিব তো শুনলাম বলেছেন, বিসিবি থেকে এখনো কোনো ফরমই তাঁদের সরবরাহ করা হয়নি। যেখানে তিনি জানাতে পারেন যে কোন সংস্করণে খেলবেন আর কোনটিতে খেলবেন না? নাজমুল : একদম ভুল। আরো তিন-চার মাস আগেই ওদেরকে ফরম দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেট অপারেশনস থেকে আমাকে সেসব পাঠানোও হয়েছে। ওখানে সাকিবের ফরমও আছে। যেখানে সে সব সংস্করণে খেলার সম্মতি দিয়ে রেখেছে। এখন খেলব বলে দুই দিন পর পর এসব করছে, কী করব বলেন? খেলুক না খেলুক, টাকা তো পাচ্ছে, কী করব?
প্রশ্ন : কখনো কখনো তো আপনাকে কঠোরও হতে দেখা গেছে। নাজমুল : সমস্যা হলো সমর্থকদের বড় একটি অংশ তারকাকেন্দ্রিক। সাকিব-তামিমরা যা করে, তা-ই ঠিক। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেসারে মূলধারার মিডিয়াও ওদের পক্ষে। আমার তো মনে হয়, ও (সাকিব) যত এসব করে, মানুষ তত ওকে পছন্দ করে। অন্য সব বাদ দিন, আমি সবচেয়ে বেশি বিচলিত আরেকটি বিষয় নিয়ে।
প্রশ্ন : কোনটি নিয়ে? নাজমুল : এয়ারপোর্টে বলা ওর কথাগুলো পড়লাম। বলেছে, আফগানিস্তান সিরিজটি নাকি সে উপভোগই করেনি। জিতেও উপভোগ করেনি? আর কে বলছে এই কথা? দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এটা আমার কাছে স্বাভাবিক লাগছে না। তার মানে, দেয়ার ইজ সামথিং রং। গতবার নির্বাচনে কোনো অবস্থাতেই আমি সভাপতি হতে চাইনি। এসব আমি মানতে পারি না বলেই। নিয়ম তো আপনার জন্য বারবার বদলাবে না। কিছু করতে গেলে মিডিয়া পেছনে লাগে, লোকে পেছনে লাগে। না হলে এসব ঠিক করা কোনো ব্যাপার?