স্পোর্টস ডেস্ক : কিছুদিন আগেও যে ছেলেটি ছিল শুধুই সাতক্ষীরার অজপাড়া গাঁয়ের এক ভবঘুরে, এখন তিনি পুরো ক্রিকেট বিশ্বের। চার মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন অতি সাধারণ একটি ছেলে হিসেবে, আর এবার তিনি বাড়ি ফিরছেন ক্রিকেট বিশ্বকে চমক লাগিয়ে, পুরো দেশকে গর্বের আসনে সমাসীন করে।
ঈদের আগেই গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল মুস্তাফিজের। সে মতে টিকিটও কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু; হঠাৎ টেস্ট দলে সুযোগ মিলে যাওয়ায় আর বাড়ি আসা হয়নি মুস্তাফিজের। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবং বহু অপেক্ষার পর মায়ের কোলে চার মাস পরে ফিরছেন ক্রিকেটের বিস্ময়কর বালক, সাতক্ষীরা এক্সেপ্রেস খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমান।
তার আগমন উপলক্ষ্যে নিজ এলাকা কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। রোজার ঈদে তাকে কাছে না পেয়ে তার পরিবারসহ বন্ধুদের ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছিল। এবার তার আগমনের খবরে যেন ঈদের আনন্দে ভাসছে তারা। মুস্তাফিজকে বরণ করার অপেক্ষায় শুধু তার পরিবার বা গ্রামের মানুষ নয়, অপেক্ষার প্রহর গুনছে পুরো সাতক্ষীরাবাসী।
দীর্ঘ ৪ মাস পর মায়ের কোলে ফিরছে এজন্য মুস্তাফিজের মা মাহমুদা খাতুন আদরের ছোট ছেলের জন্য তৈরী করছেন তার প্রিয় সব খাবার। বন্ধুরা আশায় বুক বাধছে ‘প্রিয় বন্ধু’ মুস্তাফিজের নিয়ে আনন্দ করবে, হই-হুল্লোড় করবে। কী কী করা হবে, তা নিয়ে কষছে নানান ছক। ভাইপো-ভাইজিরা অপেক্ষা করছে প্রিয় চাচা তাদের জন্য কি নিয়ে আসে তা দেখার জন্য।
মুস্তাফিজ নিজেই জানালেন, ‘শনিবার সকাল ৯টার ফ্লাইটে তিনি প্রথমে নামবেন যশোর। সেখান থেকে গাড়ীতে করে যাবেন সাতক্ষীরায়।’ সর্বশেষ বাড়িতে আসা আর এবারের বাড়ি ফেরার মুস্তাফিজ কি আলাদা? এমন প্রশ্নের জবাবে জানালেন, আগের মুস্তাফিজই থাকবেন, কখনো পাল্টাবে না তিনি। বন্ধু কিংবা কাছের মানুষের কাছে আগের মতোই। যেমন ছিল তেমনই আছে।
আগামী ২২ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া ফিটনেস ক্যাম্পের ঠিক আগের দিন ফিরবেন ঢাকায়। তার আগে অফ কাটার দিয়ে কিভাবে বিভ্রান্ত করবেন বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের- সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে, কেবল নির্ভার হয়ে ডানা মেলবেন নিজের চিরচেনা বেড়ে উঠা মুক্ত আকাশে। এই কয়েকটা দিন শুধু বিশ্রামই নিতে চান তিনি। সবার সাথে থাকবেন, ঘুরবেন। নিজের চেনা পরিবেশে প্রকৃতির বাতাস গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে চান মুস্তাফিজ।
ভাই পল্টু জানালেন, মুস্তাফিজকে গ্রহণ করতে যশোর এয়ারপোর্টে যাবেন ৮টি বাস-পিকআপ নিয়ে। আনন্দ মিছিলসহকারে ফিরবেন সেখান থেকে। বড় ভাই মাহফুজার রহমান আগে থেকেই রয়েছেন যশোরে।
মুস্তাফিজের বন্ধু মিরাজ হোসেন, মেহেদী হাসান ও মিজানুর রহমান জানালেন, প্রিয় বন্ধুকে অনেক দিন পরে ফিরে পাচ্ছেন তারা। বন্ধুকে নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরতে যাবেন। বন্ধু মোস্তাফিজ আজ বিশ্বের খ্যাতিমান ক্রিকেটার সেই আনন্দে মাতোয়ার তারা।
মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ্ব আবুল কাশেম জানালেন, মুস্তাফিজ যখন বাসা থেকে গিয়েছিল তখন ছিল আমাদের পরিবারের। এখন দেশ জয় করে ফিরছে সে। এখন আর মুস্তাফিজ আমাদের নয়, সে ১৬ কোটি মানুষের। মা মাহমুদা খাতুন জানালেন, ছোট ছেলের প্রতি সবার টান থাকে, ছোট ছেলের জন্য মন খারাপ হয়. তবুও করার কিছু নেই। আমার সন্তান হলেও এখন ১৬ কোটি মানুষের নয়নের মনি। সে অনেক দিন পর বাড়িতে ফিরছে. এটাই আনন্দের বিষয়। গত ঈদ তাকে ছাড়া করতে হয়েছিল বলে খারাপ লেগেছিল। এবার তার বাড়ীতে আসার খবরে ঈদের মতো আনন্দ লাগছে। অপরদিকে, দ্য পেরিস্কুপ খ্যাত সৌম্যের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে রোববার সাতক্ষীরায় ফিরবেন তিনিও।
প্রসঙ্গত, গেল ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ ম্যাচে অভিষেক হওয়ার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বধের নায়ক, মুস্তাফিজুর রহমাস। সুন্দরবন ঘেষা কালিগঞ্জ তারালি এবং সাতক্ষীরার যে মুস্তাফিজকে মানুষ চিনতো, সেই ছেলেটির খ্যাতি এখন পুরো দেশছাড়িয়ে -