স্পোর্টস ডেস্ক : শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভিআইপি বক্সের সামনের গ্যালারিতে দুজন বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছেন স্কটল্যান্ড-নামিবিয়ার ম্যাচ। একজনের মাথায় হ্যাট, আরেকজনের চোখে চশমা। দুজনের সঙ্গে থাকা পতাকা দেখে বোঝা গেল স্কটল্যান্ডের সমর্থক। ধন্ধে ফেলে দিল গোলায় ঝোলানো পরিচয়পত্র। তাহলে কি টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য?
উত্তরটা পাওয়া গেল মুহূর্তেই। দুজনের পরিচয়পত্রে লেখা ‘অতিথি’। হ্যাট পরা ডোনা ফ্লাক স্কটল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক নিল ফ্লাকের মা। ঠিক তখনই বোলিং করতে এসেছেন ফ্লাক। ডোনা হাতটা উঁচিয়ে উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে দেখিয়ে দিলেন ছেলেকে, ‘ওই দেখ, নিল বোলিং করছে।’
পাশে চশমা পরা ক্রিস্টিনা ওয়ালারের পরিচয়ও পাওয়া গেল। স্কটল্যান্ড যুব দলের ওপেনার জ্যাক ওয়ালারের মা। শুধু মায়েরা নন, দুই খেলোয়াড়ের বাবারাও রয়েছেন গ্যালারিতে। অদূরে স্কটল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছেন ছেলেদের।
দেখে মনে হতে পারে, সবাই ছেলেদের একাডেমিতে নিয়ে এসেছেন কোচিংয়ের জন্য। অনুশীলন শেষে সঙ্গে করে আবার নিয়ে যাবেন বাড়িতে। অবশ্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট বা সিরিজে খেলোয়াড়দের সঙ্গে অভিভাবকদের অনেক আগেও আসতে দেখা গেছে। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও স্কটল্যান্ডের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের সঙ্গে এসেছেন তাঁদের অভিভাবকেরা।
এবারের প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে হুট করে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে আসেনি অস্ট্রেলিয়া। জ্যাক ওয়ালারের বাবা স্কট ওয়ালার অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখিনি। সবই ঠিকঠাক আছে।’
স্কটল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলটির সঙ্গে এসেছেন মোট ১৫ অভিভাবক। কক্সবাজার তো বটেই, বাংলাদেশেই তাঁদের প্রথম আসা। বাংলাদেশ যে বেশ উপভোগ করছেন, বোঝা গেল ডোনার মুখে ছড়িয়ে পড়া স্নিগ্ধ হাসিতে, ‘দারুণ লাগছে। উপভোগ্য ঠাণ্ডা।’
বেশিরভাগ চল্লিশোর্ধ্ব অভিভাবকদের মাঝে এক তরুণের দেখা মিলল। বয়সই বলে দিচ্ছে, আর যা-ই হোক কোনো খেলোয়াড়ের বাবা হবেন না! ব্লেয়ার কার্নেগি স্কটল্যান্ড দলের উইকেটকিপার হ্যারিস কার্নেগির বড় ভাই। নিজেও ক্রিকেট খেলেন। তবে ভাইয়ের মতো এই পর্যায়ে খেলার সুযোগ হয়নি। তা নিয়ে আক্ষেপও নেই। ভাইকে ভীষণ উৎসাহ দেন ক্রিকেট। সেই কারণেই তো সহস্র মাইল দূরের বাংলাদেশে চলে আসা। দুপুরের সূর্যটা বেশ তাপ ছড়াচ্ছে তখন। ব্লেয়ারের কাছে এই গরমটাই সমস্যা, ‘সবই ঠিক আছে। তবে এখন গরমটা বেশি!’
কক্সবাজারে স্কটল্যান্ডের ম্যাচগুলো দেখে আগামী সপ্তাহে বেশিরভাগ অভিভাবক ফিরে যাবেন দেশে। ছেলেদের ঘিরে বিরাট স্বপ্ন তাঁদের। সামনে ঝাউবন আর সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে ডোনা এবং ক্রিস্টিনা সমস্বরেই জানালেন সেই স্বপ্নের কথা, ‘সবাই তো চায় ছেলে একদিন জাতীয় দলে খেলবে। আর সেটা হলে তো দারুণ হয়। সে ক্ষেত্রে বড় স্বপ্ন পূরণ হবে।’
যুব বিশ্বকাপ এমনই মঞ্চ, স্বপ্নপূরণের দুয়ারটা খুলে যায় খেলোয়াড় ও তাঁদের পরিবারের। সূত্র : প্রথম আলো
২৯ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর রাজু/এআর