সম্বরণ ব্যানার্জি: গোটা মাঠ বিশ্বাস করতে পারেনি, আম্পায়ারও ডাগ করে ফেলেছিল এবং ব্যাটসম্যান শেন ওয়াটসন তো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে প্রায় ৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ফেললো। যে বলটায় জাদেজা ওকে কট অ্যান্ড বোল্ড করল সেটা প্রচন্ড জোরে এসেছিল।
ক্রিকেটীয় পরিভাষায় পাওয়ার শট। এখন তো এই পাওয়ার শটের কথা মাথায় রেখে আম্পায়ারকে হেলমেট পরেও দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। সবকিছু মাথায় রেখেই বলছি, আমার মতে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট যুবরাজের বলে ম্যাক্সওয়েলের স্টাম্প।
মেলবোর্নে এই ম্যাচে ভারতের তোলা ১৮৪ রান টি–২০ ক্রিকেটে এই মাঠে কোনও দলের সর্বোচ্চ রান। তা সত্বেও ফিঞ্চ–মার্শ জুটি যেভাবে শুরু থেকে রান তোলা শুরু করেছিল, তাতে খেলাটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, এডিলেড থেকে মেলবোর্ন যখনই স্পিনাররা আক্রমনে এসেছে, অস্ট্রেলিয়া সমস্যায় পড়েছে।
ম্যাক্সওয়েলের আউট যদি টার্নিং পয়েন্ট হয়, তাহলে ম্যাচ ঘুরতে শুরু করেছিল তৃতীয় স্পিনার হিসেবে যুবি আক্রমনে আসার পর থেকেই। এবার অস্ট্রেলিয়ায় যুবি সেভাবে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলেও পার্টটাইম বোলারের ভূমিকাটা যেভাবে সামলাচ্ছে, এককথায় দুর্দান্ত।
রোহিত শর্মাও দুরন্ত ফর্মে রয়েছে। আরেকটা জিনিস যদি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রথম ৫ ওভারের বিচারে অস্ট্রেলিয়া কিন্তু ভারতের থেকে এগিয়ে ছিল। ভারত ছিল ৪৪/০, সেখানে অসিরা ৪৮/০। অস্ট্রেলিয়ার দুর্ভাগ্য স্টিভ স্মিথ, ওয়ার্নারকে ওরা এই ম্যাচে পায়নি। সে যাই হোক, সীমিত ওভারের ম্যাচে কতটা ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট হয়, রোহিতের ব্যাটিংয়েই সেটা পরিস্কার।
এদিন প্রথম ৫টা বল ডট খেলার পর ওভারের শেষ বলে সিঙ্গলস নিল। প্রথম ওভারের শেষে ভারতের বোর্ডে মাত্র ১ রান। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সেখান থেকে ভারত ১৮৪ তুলে ফেলবে এবং জিতবে কেউ কল্পনা করতে পারেনি।
বিরাট কোহলিকে দেখে মনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার মাঠকে ও পাড়ার মাঠ করে ফেলেছে। কোনও ভারতীয়কে অস্ট্রোলিয়ায় এভাবে দেখা যায়নি। এদিনও দুর্দান্ত কিছু ক্রিকেটীয় শটে কোহলি পুরো ম্যাচে ওই মোমেন্টামটাকে ধরে রাখল । ওর ভূমিকাটা দারুন। ক্রিকেটকে প্রচন্ড উপভোগ করছে। আর ভারতীয় বোলিংয়ের প্রসঙ্গ এলে বুমরার কথা বলতেই হবে। আনঅর্থডক্স বোলার।
টেকনিক্যালি পারফেক্ট নয়। বোলিংয়ের সময় বাঁ–পা সোজা থাকে না। ওকে যেন কোনও তরুণ বোলার ফলো না করে। বোলিং অ্যাকশনটা ন্যাচারেল। অনেকটা মালিঙ্গার মতো। তবে এখনকার ভারতীয় বোলারদের মধ্যে বুমরার ইয়র্কারটা পারফেক্ট। বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওকে ঠিকঠাক ধরে রাখতে পারলে ভারতীয় দলের সম্পদ হয়ে উঠবে। আইপিএলের ভিত্তিতে বুমরা ও হার্দিক পান্ডিয়াকে তুলে আনার জন্য নির্বাচকদের সাধুবাদ প্রাপ্য।
অস্ট্রেলিয়ার হয়তো পুরো শক্তির দল ছিল না। ওয়াটসনকে দিয়ে বোলিং শুরু করাতে হল। কিন্তু এই ম্যাচে স্কট বোলান্ড একমাত্র অসি বোলার যে লাইন–লেংথ ঠিক রেখে বল করে যাচ্ছিল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দাপটে অসি বোলাররা খেই হারিয়ে ফেলেছিল। তা না হলে ফকনারের মতো এই দলের সেরা বোলার প্রথম ওভারে ১৫ রান দেয়!
অধিনায়ক ফিঞ্চের ৪৮ বলে ৭৪ রানের ইনিংস কোনও কাজেই এল না। বরং দুর্দান্ত কাজে দিল রোহিতের ৪৭ বলে ৬০। তবে রোহিতের রান আউটটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোহলির কল না শুনে একেবারে স্কুল ক্রিকেটারের মতো উইকেটটা দিয়ে এলো। বেশ কয়েকটা ক্যাচ মিস হলেও এদিন ভারতের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং অসাধারন।
অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয়বার সিরিজ জিতলো ভারত। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসন্ন টি–২০ সিরিজ, এশিয়া কাপের জন্য আত্মবিশ্বাস তো বাড়বেই, টি–২০ বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর ক্ষেত্রেও এই আত্মবিশ্বাস সাহায্য করবে।
৩০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি