স্পোর্টস ডেস্ক : অলিম্পিক বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রিলের হিটে দৌড়াতেন না উসাইন বোল্ট বা আসাফা পাওয়েল। হিটে যা দৌড়াদৌড়ি, সেটা অন্যরাই করতেন। জ্যামাইকাকে সেমিফাইনালে তুলেই যাদের কাজ শেষ হতো। সেমিফাইনালে হাজির হতেন মূল দুজন।
আসল সময়ে দুজন তাদের খেলাটা দেখাতেন। ট্র্যাকে ঝড় তুলে দেশকে সোনা এনে দিতেন এই দুজন। এবারের বিশ্বকাপে ট্রাভিস হেড যেন অস্ট্রেলিয়ার উসাইন বোল্ট।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা অহেতুক সিরিজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। তাতে হারের সঙ্গে বাড়তি প্রাপ্তি শেষ ম্যাচে ট্রাভিস হেডের চোট। এমনই সে চোট যে, বিশ্বকাপের প্রথমার্ধে তাঁকে পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
অস্ট্রেলিয়া তবু তাঁকে দলে রেখেছে। প্রথম দুই ম্যাচে তাঁকে ছাড়া ছন্নছাড়া অস্ট্রেলিয়া হেরে বসেছে। তাঁর অবর্তমানে পরে মিচেল মার্শ সেঞ্চুরি পেলেও অস্ট্রেলিয়া স্বস্তি পাচ্ছিল না।
প্রথম সুযোগ পেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। জিততেই হবে—এমন এক ম্যাচে নেমে ঝড় তুললেন। ২৩ ওভারের মধ্যে দুই শ পেরোল অস্ট্রেলিয়া। কারণ, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নেমে ৫৯ বলে সেঞ্চুরি হেডের। পরে ১০৯ রানে থেমেছেন তিনি। পরের তিন ম্যাচে আবার অনুপস্থিত। না, মাঠে নেমেছেন কিন্তু ১১, ০ ও ১০ রানের সে ইনিংসগুলো তো হেডের সঙ্গে ঠিক যায় না।
সেমিফাইনালে কঠিন এক উইকেটে আবার হাজির হলেন হেড। শুরুতেই হেড যে ঝড় তুলেছিলেন, সেটাই অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিল। তাঁর ৪৮ বলে ৬২ রানের কারণেই কামিন্স-স্টার্করা টেস্ট মেজাজে খেলেও জয় নিয়ে ফিরতে পেরেছেন সেদিন।
তবে হেডের আসল পরীক্ষা ছিল আজ ফাইনালে। আহমেদাবাদে ভারত ২৪০ রানে থামলেও রান তাড়ার কাজটা যে কঠিন হবে, সেটা ভারতের ইনিংসেই বোঝা গেছে। ইনিংসের শুরুতে হেড ও ওয়ার্নারের ঝড়ই ছিল অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মূল অস্ত্র। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই আউট ওয়ার্নার। মিচেল মার্শ ও স্টিভ স্মিথ ৭ ওভারের মধ্যেই ফিরে গেলেন। অস্ট্রেলিয়ার রান তখনো ৫০ পেরোয়নি।
কিন্তু হেড হাল ছাড়েননি। স্বভাববিরুদ্ধভাবে নিজেকে আটকে রেখেছেন। প্রথম ২১ বলে মাত্র ১০ রান ছিল হেডের। কিন্তু ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়েছেন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ২ চার মেরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের চাপে ভেঙে পড়বেন না, প্রতিআক্রমণে যাবেন তিনি।
আহমেদাবাদের উইকেট কুলদীপ যাদবের ওপর ভরসা রেখেছিল ভারত। তাঁকেই প্রথম ছক্কা মারলেন। সেই কুলদীপের বলেই যখন ফিফটি ছুঁয়েছেন, নামের পাশে তখন ৫৮ বল। পরিস্থিতি ও কন্ডিশন মিলিয়ে অবিশ্বাস্য দেখাচ্ছিল সে পরিসংখ্যানকে।
সময় যত গড়িয়েছে, অবিশ্বাস্যের মাত্রা তত ছাড়িয়েছে। পরের ৩৭ বলের আটটি সীমানার বাইরে, ৯৫ বলেই সেঞ্চুরি তাঁর। কঠিন এক উইকেট ভারত যেখানে ১৬টি বাউন্ডারি মেরেছে, সেখানে লাবুশেন সেঞ্চুরির আগেই ৪ চার ও ১ ছক্কা। সেঞ্চুরির পর আরও ৩টি ছক্কা ও একটি চার।
৪৩তম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজকে পুল করতে গিয়ে যখন ধরা পড়লেন ততক্ষণে অবশ্য কিছু আসে যায় না। ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে জয় থেকে তখন আর মাত্র ২ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া।
চোটের কারণে টুর্নামেন্ট নিয়েই অনিশ্চয়তা জেগেছিল, সেই ব্যাটসম্যানই কিনা সেমিফাইনাল ও ফাইনালের ম্যাচসেরা। হেড নিজেও রোমাঞ্চিত এ নিয়ে, ‘কী দারুণ একটা দিন! অংশ হতে পেরেই তৃপ্ত। ঘরে সোফায় বসে টিভিতে (চোটের কারণে) দেখার চেয়ে নিশ্চয় অনেক ভালো।’