স্পোর্টস ডেস্ক : ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তারা ব্যস্ত। পারিজাত মিত্র, দেবব্রত সরকার মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কথা বলার সময় নেই। সুপার কাপের ট্রফি জয়ের আনন্দে ক্লাব আঙিনা গমগম করছে, সেটা হাজার কিলোমিটার দূর থেকেই আঁচ পাওয়া যায় ফোনে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী থেকে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সর্বস্তরের সমর্থকদের অভিনন্দনে ভাসছে যে ক্লাবটি, তারা কাল দুপুরে চোখ রেখেছিলেন নারী ফুটবল লিগে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলার সানজিদা আক্তার।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লাল-হলুদ জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছে। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সানজিদা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব গোলশূন্য ড্র করেছে স্পোর্টস ওডিশার বিপক্ষে।
খেলা হয়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মাঠে। একেবারে ক্লাবের অফিসে বসে জানালায় চোখ রাখলে দৃষ্টি পড়বে সবুজ ঘাসে। সেই ম্যাচটা ড্র হলেও ইস্টবেঙ্গল কর্তারা সানজিদার ওপর চোখ রেখেছিলেন।
আর অতীত বাংলাদেশের ফুটবলারদের কথা নামিয়ে আনছিলেন। ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল বাংলাদেশের ফুটবলের কথা। আসলাম, রুমি, মুন্না, গাউস, ওয়াসিম, রকিব, মিজান খেলেছেন। তবে এদের মধ্যে টানা তিন মৌসুম খেলেছেন মুন্না, সময়টা বেশি এবং তার অকাল মৃত্যুর কারণে কলকাতার ফুটবলে মোনেম মুন্নার নামটা একটু বেশি আলোচিত হয় এখনও।
স্বাধীনতার আগে আরো অনেকেই খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে। কলকাতার ফুটবলের বর্তমান প্রজন্ম এই সব খেলোয়াড়কে এখনও মনে রেখেছে।
আসলাম, মুন্না, রুমি, গাউসদের পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার সানজিদা ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।
ক্লাবের নিজস্ব মাঠ, গ্যালারি, ভিআইপি বক্স, ফ্লাড লাইট, নিজেদের সমর্থক, সাধারণ সমর্থক ক্লাবের সদস্য, কেউ টিকিট কিনে মাঠে ঢুকেছেন, কেউ মেম্বার কার্ড দেখিয়ে মাঠে ঢুকেছেন।
সানজিদার কাছে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা। একই ভাষা, একই রকম চেহারা, একই পোশাক, একই চালচলন, একই সংস্কৃতি, একই খাদ্যাভ্যাস, অথচ তাদের ক্লাব সংস্কৃতি মুগ্ধ করে। খেলা চলাকালীন সমর্থকরা গ্যালারিতে যেভাবে আওয়াজ তুলেছিল, তা দারুণ লেগেছে সানজিদার।
বল পেলে দর্শক আওয়াজ তুলেছে সানজিদা, সানজিদা বলে। বাংলাদেশের এই ফুটবলারের কাছে মনেই হয়নি সে দেশের বাইরের কোনো লিগে খেলছে। সবাইকে পরিচিত মানুষই মনে হয়েছে সানজিদার চোখে।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ভারতের নারী লিগে খেলছে, সানজিদার প্রথম ম্যাচ ছিল গতকাল। এক মিনিট চিন্তা না করে সানজিদাকে প্রথম ম্যাচেই একাদশে নামিয়ে দিয়েছেন কোচ দিপঙ্কর বিশ্বাস। পুরো ম্যাচ খেলিয়েছেন কোচ।
একটি বারের জন্য তাকে বসিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেননি কোচ। ম্যানেজার ইন্দ্রানী সরকার কলকাতায় থেকে জানালেন পুরো ম্যাচ খেলেছে এবং ভালো খেলেছে। ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তারা খুশি। প্রথম ম্যাচ বলে মানিয়ে নিতেও তো সময় লাগবে। খেলা ড্র হলেও সানিজদার পারফরম্যান্স ছাপ রেখেছে দর্শক হূদয়ে। কর্মকর্তারা খুশি।
কর্মকর্তারা জানালেন, ‘ওকে খেলতে দিন। একটা মেয়ে এত দূর থেকে এসেছে, নতুন পরিবেশ, নতুন কন্ডিশন গুছিয়ে উঠতে দিন। ওর জন্য সবে তো ভোর। আমরা সবাই মেয়েটাকে সাহস দিচ্ছি। দিন শেষে আমাদের জন্যই তো খেলছে, তাই না।’
খেলাটা যেমনই হোক। সানজিদার জন্য সবার প্রার্থনা, সে ভালো খেলুক। প্রথম বাংলাদেশি কোনো নারী ফুটবলার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলছেন। ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
দেশের নারী ফুটবলে এটা বিশাল মাইলফলক। দলের একমাত্র বিদেশি ফুটবলার ময়মনসিংহের মেয়ে সানজিদা আক্তার।
সানজিদার সঙ্গে প্রথম একাদশে ছিলেন দলের অধিনায়ক তৃষা মল্লিক, তুলসী, মিচের কাস্তানহা, মমতা মহতা, বিনমালা চানু, গোলরক্ষক মেলোডী চানু, সারীথা, প্রেমশ্বরী দেবী, মার্গারেট দেবী, সীমা কিসপোত্তা।
আগামী সোমবার ইস্টবেঙ্গলের খেলা কিকস্টার্ট এফসির বিপক্ষে। এই দলে খেলছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের নারী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।