স্পোর্টস ডেস্ক: বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন হৃদযন্ত্রের সার্জারি করে বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন। নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন আজ মঙ্গলবার বাফুফে সভাপতির বাসায় গিয়েছিলেন সৌজন্য সাক্ষাতে। প্রায় মিনিট বিশেকের বৈঠকে ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি ফুটবলের চলমান সংকটের কথাও হয়েছে।
শারীরিক অসুস্থতা ও বিধি নিষেধের জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। বৈঠক শেষে বের হওয়ার পথে ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করেছেন। গত বছর নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমার সফর বাতিল নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যে বাহাস হয়েছিল।
ক্রীড়াঙ্গনের দুই শীর্ষ ব্যক্তির কথার লড়াইয়ের পর একটা 'স্নায়ুযুদ্ধ' বিরাজ করছিল। আজকের বৈঠকের পর পাপন বলেছেন, এত দিনের সম্পর্ক এক দিনে নষ্ট হয় না।'
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সালাউদ্দিনের পরিচয় বাফুফে সভাপতি হলেও ক্রীড়াঙ্গন ও দেশের অধিকাংশ মানুষের হৃদয়ে ফুটবলার সালাউদ্দিনের চিত্রই বড় করে আঁকা। পাপনও এর ব্যতিক্রম নন, ‘ছোটবেলা মাঠেই যেতাম উনার খেলা দেখতে। উনার মতো কিংবদন্তী ফুটবলার তো দেশে নেই।’ দুই জনই এখন দুই খেলার শীর্ষ দায়িত্বে। একজনের মন্তব্যে আরেক জন মনঃক্ষুণ্ন হলেও সেখানেই শেষ বলে জানালেন পাপন, ‘অনেক কথায় উনি হার্ট (আহত) হতে পারেন, আমি হতে পারি। একটা রিঅ্যাকশন (প্রতিক্রিয়া) দিলাম। সেটা ওখানেই শেষ, কিন্তু সম্পর্ক তো শেষ হবে না।'
আজ সালাউদ্দিনের বাসায় ব্যক্তিগত আলোচনার মধ্যেও ফুটবলের কিছু সমস্যার কথা এসেছে। পাপন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উনি সুস্থ হয়ে একেবারে ফিরলে দেখব, এর মধ্যেও বলেছি কিছু কাগজপত্র পাঠাতে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যেন আর সময় ক্ষেপণ না হয় এবং বিকল্প খেলার জায়গা করা যায় কিনা সেটাও আমার বিবেচনায় রয়েছে।’ চলতি সপ্তাহেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যাবেন পাপন।
বাফুফে সভাপতি হৃদযন্ত্রের সমস্যা অনুভব করে বিজয় দিবসের পর দিনই হাসপাতালে ভর্তি হন। সপ্তাহ দুয়েক হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে থেকে বাইপাস সার্জারি হয় ২৮ ডিসেম্বর। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাসায় আসেন। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন সীমিত পরিসরে শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে দেখা করছেন।
সালাউদ্দিনকে কাছ থেকে দেখে পাপনের পর্যবেক্ষণ, ‘তিনি যখন অসুস্থ তখন আমি নির্বাচনী ব্যস্ততায় ছিলাম। এরপর ফুটবল ফেডারেশন যখন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন তার খোজ নিয়েছি। মাঝে আমি এসিসির সভায় দেশের বাইরে ছিলাম। পরশু দিন যখন শুনলাম এখন সাক্ষাৎ করা যাবে। তখনই বলেছি, ‘পরশু (আজ) দিন আজ যাব। আমি তো আর ডাক্তার না। দেখে ভালো লাগলো হাঁটাচলা করছেন। সুস্থই লেগেছে। তবে এটা সঠিক বড় অপারেশন হয়েছে। রিহ্যাব দরকার আছে।’
ক্রীড়া মন্ত্রী হয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের সঙ্গে বসেছেন নাজমুল হাসান পাপন। আগামী সপ্তাহে আবার অন্য ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসবেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রয়েছে সরকারি অনেক সংস্থার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খেলা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। ফুটবলে নেই অগ্রণী ব্যাংক, হকিতে না থাকার সম্ভাবনা সোনালী ব্যাংকের। তাদের ক্রীড়াঙ্গনে ধরে রাখতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ থাকবে কিনা এই প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘আপনি যেটা বলেছেন সেটা গুরুত্বর্পণ তবে অ্যাডভান্সড পর্যায়ের। আগে ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরো গভীরে যাওয়া যাবে।’
বাংলাদেশে পঞ্চাশটির অধিক ফেডারেশন রয়েছে। সেই ফেডারেশনগুলোর অধিকাংশের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা নেই বলে মনে করেন নতুন ক্রীড়া মন্ত্রী, ‘আমাদের ফেডারেশনের সংখ্যা ৫৫ টির মতো। অনেক ফেডারেশন আছে ৯০ শতাংশ মানুষ হয়তো জানেও না। ফলে ঐ সকল খেলা অনেক চেষ্টার পরেও একটা পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’ অন্য সকল ফেডারেশনের চেয়ে ফুটবল ফেডারেশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব নতুন মন্ত্রীর কন্ঠে, ‘ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। এটা নিঃসন্দেহে এবং এর গুরুত্বও অনেক।’