স্পোর্টস ডেস্ক : ইন্টার মায়ামির দাবি, চোট থেকে যুঝতে থাকা লিওনেল মেসিকে সেদিন এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামানোর অনুমতি দেননি দলের ডাক্তাররা।
কিন্তু সে ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় হংকংয়ের মানুষ, ম্যাচের আয়োজক কিংবা হংকং সরকারের কেউই। গত ৪ ফেব্রুয়ারি হংকংয়ের নির্বাচিত একাদশের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ম্যাচে মেসির না খেলার পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তারা।
ষড়যন্ত্রের আলোচনা আরও বেগ পেয়েছে, যখন ওই ম্যাচের তিন দিন পর জাপানের ক্লাব ভিসেল কোবের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ম্যাচের ৬০ মিনিটে ঠিকই মাঠে নামেন মেসি।
এ নিয়ে চীন খেপেছে। আর চীনের সে ক্ষোভের প্রভাব পড়ল মেসির জাতীয় দল আর্জেন্টিনার ম্যাচের ওপর। আগামী মাসে চীনের হাংঝু ও বেইজিংয়ে আর্জেন্টিনার দুটি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, হাংঝুতে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে, বেইজিংয়ে আইভরি কোস্টের বিপক্ষে।
কিন্তু চীনের ক্রীড়াসংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ আজ জানিয়ে দিয়েছে, হাংঝুর ম্যাচটি তাঁরা বাতিল করে দিচ্ছেন! সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে এই খবর। বেইজিংয়ের ম্যাচটি নিয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
হংকংয়ে মেসির না খেলা নিয়ে কদিন ধরেই চীনা সমর্থক ও আয়োজক থেকে শুরু করে প্রশাসনও খেপে ছিল মেসি ও মায়ামির ওপর।
ম্যাচের দিনই দ্বিতীয়ার্ধে মেসিকে মাঠে দেখার দাবি জানাতে শুরু করেছিলেন দর্শক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেসি না নামায় মেসিকে তো বটেই, ইন্টার মায়ামির মালিক ডেভিড বেকহ্যামকেও দুয়ো দেন দর্শক। টিকিটের অর্থ ফেরতও দাবি করেন তাঁরা।
রয়টার্স আজ প্রতিবেদনে লিখেছে, হংকংয়ের ম্যাচটির আয়োজকেরা দর্শককে টিকিটের অর্থের ৫০ শতাংশ ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর হাংঝুর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ আজ বিবৃতিতে দিয়েছে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা।
‘একটি কোম্পানি ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দল একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান হিসেবে এই চুক্তি করেছিল যে, তারা (আর্জেন্টিনা দল) এই বছরের মার্চে হাংঝুতে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। কিন্তু সবাই জানেন – এমন কিছু সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে চোখ রেখে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মনে হচ্ছে, প্রীতি ম্যাচটি আয়োজনের সব শর্ত পূরণ হচ্ছে না। সে কারণে আমরা ম্যাচটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলাম’ – হাংঝুর প্রশাসনের বিবৃতিতে লেখা।
রয়টার্স জানিয়েছে, বেইজিংয়ের ম্যাচের ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি। চীন ও আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের যোগাযোগ করেও এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি বলেও জানাচ্ছে রয়টার্স।
হংকংয়ে ইন্টার মায়ামির ম্যাচটির আয়োজক প্রতিষ্ঠান ট্যাটলার এশিয়া ইনস্টাগ্রামে তাদের পেইজে লিখেছে, রোববারের ম্যাচে মেসি বেঞ্চে বসে থাকায় সমর্থকরা যে হতাশ হয়েছেন, এতে তাঁরা ‘অনেক কষ্ট পেয়েছেন’ এবং তাঁদের ‘হৃদয় ভেঙে গেছে।’
হংকংয়ে ইন্টার মায়ামির সে ম্যাচে ৪০ হাজার দর্শক এসেছিলেন মাঠে। রয়টার্স জানাচ্ছে, টিকিটের দাম প্রায় ৬৪০ ডলার ছিল, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০ হাজার টাকারও বেশি! ট্যাটলার এশিয়া তাই জানাচ্ছে, অফিশিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে টিকিট কেনা দর্শকের টিকিটের দামের ৫০ শতাংশ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছে তারা।
সেদিন ম্যাচের পর ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো জানিয়েছিলেন, মেসিকে এক মিনিটের জন্য নামানোর অনুমতিও যদি ক্লাবের চিকিৎসকদের কাছ থেকে পেতেন, তাহলেও তিনি মেসিকে নামাতেন। এমনকি সেদিন সুয়ারেসকেও নামায়নি মায়ামি। কিন্তু জাপানে এর তিন দিন পর দুজনই খেলেছেন, এ কারণে আরও বেশি খেপেছে চীনারা।
ট্যাটলারের আরও অভিযোগ, ‘আমরা যখন জানতে পারলাম যে মেসি খেলতে পারবেন না, আমরা ইন্টার মায়ামির মালিকপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে খেলার বাইরেই তাঁকে (মেসি) বেঞ্চ থেকে মাঠে পাঠানো হয়, যাতে তিনি দর্শকদের অভিবাদন জানাতে পারেন এবং ব্যাখ্যা করতে পারেন কেন তিনি খেলতে পারছেন না। সেটা তিনি করেননি। ব্যাপারটা হলো, মেসি ও সুয়ারেস যে ৭ ফেব্রুয়ারিতেই জাপানে খেললেন, সেটাকে আমাদের জন্য আরেক দফা অপমানজনক মনে হচ্ছে।’
জাপানে সেদিন মেসিদের খেলার কারণে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম লিখেছে, হংকংয়ে না খেলেও মেসির জাপানে খেলার কারণে হংকংয়ের প্রতি ভিন্ন আচরণের অভিযোগ উঠছে।