শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৯:৪৬:১১

সমতা না এলে মুখ পুড়তো ঘরের ছেলের!

সমতা না এলে মুখ পুড়তো ঘরের ছেলের!

স্পোর্টস ডেস্ক : মধ্যরাতের সমুদ্রের মতো গর্জন।  যেন এ মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিল গোটা স্টেডিয়াম৷ ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ তখন গৌণ!
১৮.৪ ওভার৷ থিসারা পেরেরার তালুবন্দি হার্দিক পান্ডিয়া৷ সঙ্গে সঙ্গে উত্তাল রাঁচির জেএসসিএ স্টেডিয়ামের হাজার চল্লিশেক গ্যালারি৷

হার্দিক আউট হওয়ার আনন্দে নয়, মাঠে যে নামছেন ঘরের ছেলে, মহেন্দ্র সিং ধোনি৷ গ্যালারি জুড়ে জ্বলে উঠল মোবাইলের ফ্লাশ৷ অতদূর থেকে কী ছবি আসবে, ঈশ্বরই জানেন৷

তবুও বাড়ি গিয়ে তো দেখানো যাবে, রাঁচিতে ধোনির ম্যাচে আমি ছিলাম! কে বলতে পারে, এটাই হয়তো ঘরের মাঠে ভারত অধিনায়কের শেষ ম্যাচ৷ সেই ম্যাচেও রেকর্ড অক্ষত থাকল ধোনির৷ রাঁচিতে ভারত অধিনায়ক হিসেবে কোনোদিন হারেননি তিনি৷ এবারও তাই৷ সহজ জয়, সিরিজ আপাতত ১-১৷ ফয়সালা রোববার৷

হাতে ছিল আটটা বল৷ অর্থাত্‍ তেমন কিছুই করার নেই৷ সেই সময়ই ম্যাচের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তটা হলো৷ হার্দিকের পর থিসারা পেরেরার বলে ক্যাচ দিয়ে পরপর ফিরে গেলেন সুরেশ রায়না ও যুবরাজ সিং৷ হ্যাটট্রিক৷ বেচারা ধোনি কী আব করবেন? মাত্র পাঁচ বল খেলার সুযোগ পেলেন৷ তাতে এল ৯ রান৷ টি টোয়েন্টির বিচারে খারাপ কিছু নয়৷ তবে মন ভরল না গ্যালারির।

ম্যাচ ছিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়৷ কিন্ত্ত বিকেল থেকেই স্টেডিয়ামের চারপাশের পরিবেশ রঙীন হয়ে উঠেছিল৷ গালে তেরঙা আঁকা সুন্দরীরা৷ পতাকা-জার্সি৷ ভারতের ম্যাচ থাকলে সব জায়গাতেই যা-যা হয় আর কী৷ রাঁচিতে প্রচুর বাঙালি৷ তাই সরস্বতী পূজার বেশ চল৷ জায়গায় জায়গায় প্যান্ডেল৷ ভ্যানে করে আসছে ঠাকুর৷ সব মিলিয়ে উত্‍সবের পরিবেশ৷

ব্যাটিংটাও উত্‍সবের মেজাজেই শুরু ভারতের৷ টস জিতে শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং ৷ বোধহয় পুনে ম্যাচের রিপ্লে চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক চণ্ডীমল৷ বলেও দিলেন, উইকেট তো পুনের মতোই৷ তাই ফিল্ডিং৷ বুঝতে পারেননি, প্রতিপক্ষ টিমটার নাম ভারত৷ রোজ এক জিনিস হয় না৷

আর ধোনি সেখানে হাল্কা মেজাজে বললেন, অনেক দিন পর মেয়েকে দেখলাম৷ বাড়িতে সময় কাটালাম৷ এটাই আমার ক্লান্তি কাটিয়ে দিয়েছে৷

রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান জুটির শুরুটা মারমার-কাটকাট৷ সাত ওভারের মাথায় শিখর যখন ফিরলেন, তখনই ওপেনিং জুটিতে উঠে গেছে ৭৫৷ শিখর আউট হলেন ৫১ রানে৷ তার আগে, ২২ বলে ৫০ করে ফেলেছেন৷

কম বলে হাফ সেঞ্চুরিতে শিখর তৃতীয় ভারতীয়৷ এর আগে যুবরাজ করেছেন তিনটি (দুটো ৫০ রান কুড়ি বলে৷ একটি ১২ বলে)৷ গম্ভীর একটি (১৯ বলে)৷ সাতটা চার, দুটো ছয়ে সাজানো ছিল শিখরের ইনিংস৷ রোহিতের ৩৬ বলে ৪৩ রানকেও বাইরে রাখা যাবে না৷

রায়নার সঙ্গে জুটিতে অজিঙ্ক রাহানে এবং হার্দিক পান্ডিয়াও রান বাড়ালেন৷ বিশেষ করে পান্ডিয়া৷ তার ১২ বলে ২৭ রান মিডল অর্ডারকে ভরসা দেবে৷ যা নিয়ে এখন সবচেয়ে চিন্তা৷ যেমন, যুবরাজকে নিয়ে এ দিনও প্রশ্ন৷ খাতা খুলতে তো পারলেনই না৷

থিসারা পেরেরাকে অকারণ হ্যাটট্রিকও দিয়ে গেলেন৷ হ্যাটট্রিক বলে ছক্কা মারতে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না৷ বিশ্বকাপে জায়গা পেয়ে গেছেন। আইপিএল নিলামে সাত কোটি পেয়েছেন৷ কিন্ত্ত এ রকম খেললে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত এগারোতে জায়গা হবে তো? পরপর তিনটি আউটে শেষেরদিকে রানও কম উঠল৷ না হলে ২১৫ হওয়া উচিত ছিল৷

১৯৬ রান জ্বল জ্বল করছিল স্কোরবোর্ডে৷ ম্যাচের ভাগ্য কার্যত তখনই লেখা হয়ে গিয়েছিল৷ দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারতেন তিলকরত্নে দিলশানকে নিয়ে৷ তাঁকে দাঁড়াতেই দিলেন না অশ্বিন৷ প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্টাম্পড৷ মাঝে চণ্ডীমল (৩১) ও কাপুগেদারা (৩২) সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন৷

কিন্ত্ত ১৬ ম্যাচে তিন উইকেট চলে যাওয়ার পর সেই ম্যাচে লড়াইয়ের মতো আর কিছু থাকে না৷ ছিলও না৷ প্রশংসা করতে হবে আশিস নেহরার৷ বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাচ্ছেন৷ এ দিনও শুরুতেই দুটো উইকেট৷ ম্যাচ ওখানেই শেষ৷

সিরিজে সমতা এল৷ আবার যুবরাজকে নিয়ে প্রশ্নও থাকল৷ প্রশ্ন থাকল, জঘন্য আউটফিল্ড নিয়েই৷ মাঠের ফলাফল অন্য রকম হলে ধোনির ঘরের মাঠই 'ভিলেন' হয়ে যেত৷

এত কিছুর পরেও কিন্ত্ত বলতে হচ্ছে, পরীক্ষা হলো না৷ শ্রীলঙ্কাকে, যে টিমে মালিঙ্গা নেই, কুলুশেখরা নেই, ম্যাথাউস নেই, সেই টিমকে ভারত হারাবে, এটাই স্বাভাবিক৷

ভারতের জন্য ভালো ব্যাপার, ভারতের জন্য না বলে ধোনির জন্য বলাই ভালো৷ তা হলো, বিরাট কোহলি ছাড়াই জয় এল৷ সিরিজে সমতা এল৷
না হলে ঘরের মাঠে মুখ পুড়তো ঘরের ছেলের!
১৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে