স্পোর্টস ডেস্ক : আর্জেন্টিনার দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক শিরোপাখরা ঘুচেছে মহাতারকা লিওনেল মেসির হাত ধরে। তার জন্য কাতার বিশ্বকাপে মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে খেলেছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, রদ্রিগো ডি পল ও জুলিয়ান আলভারেজরা।
একইভাবে মেসিকে আরও দীর্ঘ সময় জাতীয় দলে পাওয়ার ইচ্ছার কথা সতীর্থরা জানিয়ে আসছেন। যদিও ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না সেই নিশ্চয়তা তিনি নিজেও দিতে পারেননি। একইসঙ্গে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক কথা বলেছেন ইন্টার মায়ামিতে নেইমার জুনিয়রের যোগদান প্রসঙ্গ ও রিয়াল মাদ্রিদের সাম্প্রতিক সাফল্য নিয়েও।
আজ (শুক্রবার) আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ইনফোবেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোপা আমেরিকায় দলের লক্ষ্যসহ মেসি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
গতবারের চ্যাম্পিয়নরা এবারও শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে বলে জানান তিনি, ‘আমি মনে করি আর্জেন্টিনা সবসময়ই ফেভারিট। আমরা যখন সবকিছু জিতিনি, তখনও আর্জেন্টিনা এমন ফেভারিট ছিল। যখন একটি চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়, সেটা বিশ্বকাপ হোক, কোপা আমেরিকা বা অন্য কিছু, ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনাও এই কোপা আমেরিকায় শিরোপার দাবিদার।’
প্রতিপক্ষ অন্য দেশগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো খুবই শক্তিশালী। উরুগুয়ে খুব ভালো দল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডরও তাই।
সব ম্যাচ খেলা খুব কঠিন হয়ে যায়, তবে আমি মনে করি কোপা আমেরিকায় লড়াইটা হবে সমানে সমান। ২০১৬ সালে যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রে কোপা খেলেছি, সেটিও ছিল দুর্দান্ত। ফাইনালে হারলেও সেবার আমরা দারুণ একটি টুর্নামেন্ট পার করেছি। আমরা জয় এবং বড় অর্জনের লক্ষ্যে সবসময় জাতীয় দলে খেলি, অন্য সবকিছুর চেয়ে এটা ভিন্ন এবং আমাদের মনে আলাদা প্রশান্তি দেয়।’
আর্জেন্টাইন সাংবাদিক পোল্লো আলভারেজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওঠে আসে মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে আমি কিভাবে অনুভব করছি এবং শারীরিক ফিটনেসের ওপর। আমি এ বিষয়ে বাস্তববাদী। এখনও অনেক সময় আছে, আবার সময়ও কম বলা যায়, কারণ খুব দ্রুত সময় যাচ্ছে। বয়সটা এখানে প্রধান বাস্তবতা, যদিও এটি কেবলই একটি সংখ্যা।’
বর্তমানে এই বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকার বয়স ৩৬, পরবর্তী আসরের সময়ে যা দাঁড়াবে ৩৯–এ। তাই কেবল মেসির পারফরম্যান্স কিংবা ও তখনকার পরিস্থিতির ওপর বিষয়গুলো নির্ভর করছে না। তখন অবস্থা আরও ভিন্ন হবে বলেও ধারণা মেসির, ‘আমি এখন যে ম্যাচগুলো খেলছি তার সঙ্গে আগে ইউরোপে খেলার সঙ্গে পার্থক্য আছে। সেখানে প্রতি তিনদিনে খেলা থাকত, হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা ঘরোয়া লিগে, ফ্রান্স কিংবা স্পেনে। সবকিছু নির্ভর করছে আমি ও বাকি সতীর্থদের অনুভূতির ওপর। আমি ওই পর্যায়ে কেমন অবস্থানে থাকি দেখা যাক।’
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে গুঞ্জন উঠেছে আমেরিকান মেজর সকার লিগে (এমএলএস) মেসি–সুয়ারেজদের দল মায়ামিতে যোগ দেবেন নেইমার। সেই গুঞ্জনের জবাবও দিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক, ‘আমরা প্রায় সময় কথা বলি। এমনকি লুইসসহ (সুয়ারেজ) আমাদের তিনজনের একটি চ্যাট গ্রুপ আছে, সেখানে নেই (নেইমার) দুর্দান্ত স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে…। তাকে দলে আনার বিষয়? না, আমি জানি না। সত্যি কথা হচ্ছে এটি বেশ কঠিন।’
কেন মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে আবারও নেইমারের এমএসএন–ত্রয়ী গড়া সম্ভব নয়, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড, ‘সে এখন সৌদি আরবে আছে এবং আমার মনে হয় সেখানে আরও এক বছর চুক্তির মেয়াদ বাকি। সে একটি কঠিন বছর পার করেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইনজুরিতে থাকার কারণে। সবমিলিয়ে এটি (মায়ামিতে যোগ দেওয়া) কঠিন। তবে আমি আসলে জানি না, জীবন অনেকদিকে মোড় নেয়, তাই যেকোনো কিছু হতে পারে। আপাতত এই মুহূর্তে যে এমন কিছু হচ্ছে না আমি এটাই জানি।’
মেসি ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় (২০ বছরেরও বেশি) স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন। যেখানে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ। সম্প্রতি ওয়েম্বলিতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে তারা রেকর্ড ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে। এমনকি স্প্যানিশ লা লিগা ও সুপার কাপের শিরোপাও গেছে তাদের ঘরে। ফলে লস ব্লাঙ্কোসদের প্রসঙ্গও আসে মেসির সামনে। জবাবে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলছেন, ‘আপনি যদি ফলাফলের ভিত্তিতে কথা বলেন, তাহলে এটা (রিয়াল) মাদ্রিদ।’
একইসঙ্গে সাবেক গুরু পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটির প্রশংসাও করেন মেসি, ‘আপনি যদি খেলার ধরনের কথা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে গার্দিওলার সিটিকে পছন্দ করি এবং আমি মনে করি গার্দিওলা যে দলে থাকবেন সেটি বিশেষ হবে। কারণ সে যেভাবে আছে, সে যেভাবে প্রশিক্ষণ দেয় এবং সে যেভাবে তার দলগুলোকে খেলতে বাধ্য করে, এই দিক থেকে সিটি সেরা। ফলাফলে (সেরা) রিয়াল মাদ্রিদ।’
উল্লেখ্য, আগামী ২০ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শুরু হবে কোপা আমেরিকা। অবশ্য তার আগে একই মাটিতে ইকুয়েডর ও গুয়াতেমালার বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলবে লিওনেল স্কালোনির দল। সে কারণে বর্তমানে আর্জেন্টিনা দল মায়ামিতে অবস্থান করছে। সেখানে অনুশীলন করছেন মেসি-আলভারেজরা।