স্পোর্টস ডেস্ক : আরও একবার বাংলাদেশের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের শেষদিকে তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
অথচ এই মাহমুদউল্লাহই গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন না। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের পরিকল্পনারও বাইরে ছিলেন। শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেও দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে হয়েছিল নানা টালবাহনা। এমন একজনকে ছাড়াই বাংলাদেশ এগোতে চেয়েছিল, সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের।
শনিবার (৮ জুন) সামাজিক মাধ্যমে হার্শা ভোগলে লেখেন,‘বাংলাদেশ একসময় মাহমুদউল্লাহকে ছাড়াই এগিয়ে যেতে চেয়েছিল, বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
বিশ্বকাপ শুরুর মিশনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১২৫ রান তাড়া করতে নেমে ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য তাওহিদ হৃদয়ের ২০ বলে ৪০ রানের ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়ে সহজ জয়ের বার্তা দিয়েছিল দল। কিন্তু হৃদয় ও লিটন দাসের আউটের পর আবার বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। এরপর ১৭তম ওভারে সাকিব আল হাসানের বিদায় যোগ করে বাড়তি চাপ।
১৮তম ওভারে আক্রমণে এসে নুয়ান থুশারা টানা দুই বলে তুলে নেন রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদকে। ক্রিজের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জয়ের জন্য ১২ বলে মাত্র ১১ রান দরকার হলেও সে সময় মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা বুঝি ফসকে গেল বাংলাদেশের। তবে মাহমুদউল্লাহ স্ট্রাইক পেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল টাইগাররা।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে দাসুন শানাকার ফুলটস বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারলেন। বল সোজা গ্যালারিতে। পরের ওভারের জন্য অপেক্ষা না করে ম্যাচও শেষ করলেন এই ওভারেই। ১৩ বলে ১৬ রানের ইনিংসটা দেখতে ছোট মনে হলেও, বাংলাদেশের জয়ের জন্য শেষদিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসই ছিল এটি।
মাহমুদউল্লাহর এ ইনিংস কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়ে এনেছিল ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির স্মৃতি। হাতে ২ উইকেট, ৪ বলে প্রয়োজন ১২ রান। সেখানে এক ছক্কা ও এক চারের মারে তিন বলেই ১২ রান তুলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস জয়ে এনে দিয়েছিলেন তিনি। দল উঠেছিল ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
প্রায় ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহ অনেক বারই হয়েছেন বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা। অথচ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে জায়গায় পাননি তিনি। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটের পরিকল্পনা থেকেও বাদ ছিলেন দীর্ঘ সময়।
ভারতের মাটিতে হয়ে যাওয়া সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেও দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে হয়েছে নানা টালবাহানা। দ্বিতীয় মেয়াদে চান্ডিকা হাথুরুসিংহে কোচ হওয়ার পর বুড়িয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহকে দলে চান না বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে। কিন্তু বয়স ৩৮ হলেও যে মাহমুদউল্লাহ ফুরিয়ে যাননি, সেটা আরেকবার প্রমাণ করেছেন শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে।
ম্যাচ শেষে তাই জয়ের নায়কের সঙ্গে আলিঙ্গন করতেও দেখা যায় কোচ হাথুরুসিংহকে। সে দৃশ্য দেশে অবাক হয়েছেন অনেক টাইগার সমর্থকই। অথচ বিশ্বকাপে পাড়ি দেয়ার আগেও দলের অফিশিয়াল ফটোসেশনে কোচের পাশের সিট থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে বসেন তিনি।
যে দৃশ্য দেখে অনেকে ধরেই নিয়েছিল, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া হাথুরুর সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর দ্বন্দ্বের খবরটি বুঝি সত্যি। কিন্তু শনিবার দুজনের আলিঙ্গনের দৃশ্য যেন সে ধারণার পুরোপুরিই বিপরীত।