সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৬:৩৬:৫৫

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ফেভারিট দল না: ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার বোরিয়া মজুমদার

এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ফেভারিট দল না: ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার বোরিয়া মজুমদার

স্পোর্টস ডেস্ক: শ্রীলঙ্কা শুধু ওয়ার্ল্ড টি২০ –র বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তাই নয়, ঢাকাতে তারা যথেষ্ট ভাল খেলে জিতেছিল। ফাইনালে যেভাবে ভারতকে হারিয়েছিল, খুব কম্প্রিহেনসিভ একটা জয় ছিল সেটা। কিন্তু তখনকার শ্রীলঙ্কা আর এখনকার শ্রীলঙ্কা এক নয়।

শ্রীলঙ্কার যে মূল তারকা প্লেয়াররা, তাদের হয় চোট-আঘাত রয়েছে না হলে অবসর নিয়েছেন, অথবা বয়স বেশী হয়ে গেছে – যাদের কেরিয়ারের সেরা সময়টা শেষ হয়ে গেছে। যেমন কুমার সাঙ্গাকারা বা মাহেলা জায়াওয়ার্ধানে এখন আর খেলেন না, লাসিত মালিঙ্গার ক্রমাগত চোট আঘাত চলছে।

শ্রীলঙ্কার এই যে তিনজন মূল প্লেয়ার – এঁরা হয় নেই বা থাকবেন না। ঢাকায় ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড টি২০তে যে শ্রীলঙ্কা ছিল, যখন প্রায় সবাই টপ ফর্মে ছিলেন, এবছর কিন্তু আর সেই জিনিষটা নেই।

যদিও তাদের কয়েকজন খুব প্রতিভাবান প্লেয়ার আছেন যেমন দীনেশ চান্ডিমাল, যেরকম মালিঙ্গা পড়তি ফর্মের হলেও খেলবেন, যেমন সাচিত্রা সেনানায়েকার স্পিন বা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এখনও দারুণ অল-রাউন্ডার।তবে শ্রীলঙ্কার যেরকম আগ্রাসী মনোভাব দেখা যেত মাঠে, সেটা আর নেই।তাই আমি আমার প্রথম তিনটে ফেভারিট টীমের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে রাখতে পারছি না।

যদিও টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে কোন্‌ টীম সেমিফাইনালে যাবে, সেটা বলা খুব কঠিন। আগে থেকে ভবিষ্যতবাণী করাটা ঝুঁকির ব্যাপার।তবুও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ওই গ্রুপে শ্রীলঙ্কার থেকে ভাল টীম রয়েছে।

ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে যদি তাকাই – এদের বর্তমান অবস্থা শ্রীলঙ্কার থেকে উন্নত, কারণ তাদের মোটের ওপর ভারসাম্যটা রয়েছে টীমে।দক্ষিণ আফ্রিকার কথা যদি ধরি, এবি ডি’ভিলিয়ার্স বা তাঁর যে দলটা, সেটা শ্রীলঙ্কার থেকে বৈচিত্র্যে, ভারসাম্যে এগিয়ে আছে।

আবার এটাও ঘটনা যে শ্রীলঙ্কা আই সি সি টুর্নামেন্টে বরাবরই ভাল খেলে। পাঁচ বছর আগে, ২০১১র ওয়ার্ল্ড কাপে তারা ফাইনালে উঠেছিল, ২০১৪ ওয়ার্ল্ড টি২০ কাপে তারা চ্যাম্পিয়ন, ২০১৫ তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলেছিল।

অস্ট্রেলিয়াতে সেবার চারটে ম্যাচে চারটে শত রান করেছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাওয়ার আগে দারুণ খেলছিল টীমটা।

শ্রীলঙ্কাকে কখনও পুরোপুরি বাতিল বলে দেওয়া যায় না, কিন্তু মোটের ওপরে একই গ্রুপে থাকা ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার টীমগুলোর সুযোগ শ্রীলঙ্কার থেকে একটু বেশী।

শ্রীলঙ্কার সেরা তিন টা বেছে নেওয়া খুবই সোজা কাজ। আগের থেকে শ্রীলঙ্কার টীমে 'ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার'-এর সংখ্যা অনেক কমে গেছে । তবুও এই টীমের সেরা তিন বাছতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে লাসিত মালিঙ্গার কথা।
উনি একটা সময়ে টি২০ জগতে সেরা বোলার ছিলেন। এখন তাঁর বোলিংয়ে পেস কমে গেছে, শারীরিক দক্ষতাও কমেছে।

তা সত্ত্বেও লাসিত মালিঙ্গা যে জায়গায় ইয়র্কারগুলো রাখেন, সেটা খেলা অনেকের পক্ষেই কঠিন। আই পি এলে তাঁর বাজারদর এখনও যথেষ্ট ভাল। দু’নম্বরে রাখব দীনেল চান্ডিমাল। অধিনায়ক হয়ে ভারত সফরে এসেছেন এখন। অত্যন্ত প্রতিভাবান প্লেয়ার।

উইকেট কিপিং করতে পারেন, খুব ভাল ফিল্ডার, আবার আগ্রাসী ব্যাটসম্যান – যে কোনও মুহূর্ত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
তিন নম্বরে আমি রাখব সাচিত্রা সেনানায়েকা-কে। উনার অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা ছিল। কিন্তু উনার মতো অফ স্পিনের বৈচিত্র্য ভারতের পিচে প্রয়োজন। এই তিনজন ছাড়া শ্রীলঙ্কায় সেই অর্থে তারকা প্লেয়ার নেই।

যদিও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দারুণ প্লেয়ার, কিন্তু উনি একার হাতে ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন, সেরকম নজির কম। উনার ওপরে শ্রীলঙ্কা ভরসা করবে ঠিকই, আর আশা করা যায় সেই প্রত্যাশা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস পূরণ করতে পারবেন। তবে শ্রীলঙ্কার কয়েকটা অ্যাডভান্টেজও আছে। যেমন ওদের আই সি সি টুর্নামেন্টের রেকর্ড সব টীমের থেকে ভাল। ভারত আর শ্রীলঙ্কার উইকেট একরকম। দুই জায়গাতেই বল একই রকম টার্ন করে।

এছাড়া শ্রীলঙ্কার অনেক প্লেয়ার আই পি এলে নিয়মিত খেলেন। লাসিত মালিঙ্গা মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেন, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দিল্লির হয়ে গতবারও খেলেছেন সাড়ে সাত কোটি টাকা নিয়ে, দীনেশ চান্ডিমাল, এবার থিসেরা পেরেরা পুনে ওয়ারিওর্স-র হয়ে খেলছেন।

আই পি এলে খেলার অভিজ্ঞতা শ্রীলঙ্কার অনেক প্লেয়ারকে একটা বাড়তি সুবিধা দেবে।এটাও মাথায় রাখতে হবে টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক একমাস আগে এখন ভারতের মাটিতে খেলছে। তাই শ্রীলঙ্কা যদি এইসব সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারে, তাহলে তাদের কিছুটা আশা আছে। তবে শেষে আবারও বলি, তারা কিন্তু এই টুর্নামেন্টের ফেভারিট দলগুলোর একটা নয়।-বিসিবি
১৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে