স্পোর্টস ডেস্ক : যুব বিশ্বকাপ শেষ। ফিরে গেছে দলগুলো। কিন্তু রেখে গেছে বহু স্মৃতি। আগামীতে যা নিয়ে রোমন্থনে ব্যস্ত থাকবেন ক্রিকেটার, ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে তার আগেই ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বসে পড়েছেন হিসাবের খেরো খাতা নিয়ে। যুব বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সকে কাটাছেঁড়া করে বসে পড়েছেন ভবিষ্যতের তারকা খুঁজতে। পেয়েও যাবেন কোনো সন্দেহ নেই।
ক্রিকেটবিশ্ব হয়তো পেয়ে যাবে ভবিষ্যতের শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন, ওয়াসিম আকরামদের মতো তারকা ক্রিকেটার। যারা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে শাসন করবেন ক্রিকেটবিশ্ব। কিন্তু কারা হবেন ভবিষ্যতের তারকা? পরিসংখ্যান অনেকের নাম বলছে। এদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশের মেহেদি হাসান মিরাজ। যিনি ব্যাট ও বল হাতে যুব বিশ্বকাপ শাসন করেছেন।
লারা, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা-সবাই যুব বিশ্বকাপ খেলেই আজকের তারকা। লারা একমাত্র ক্রিকেটার যার নামের পাশে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত ৪০০ রানের ইনিংস লেখা। বুলবুল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। কোহলি এখন বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। রোহিতের নামের পাশে লেখা ওয়ানডে ক্রিকেটের দু-দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। এদের মতো আরও অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ। কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশ, ভারত, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভবিষ্যত্ তারকা পাচ্ছে যুব আসর থেকে।
এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে দুবার। দুবারই ফাইনাল খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৪ সালে রানার্সআপ হয়েছিল। এবার ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে প্রথমবারের মতো জিতে নেয় শিরোপা। শিরোপা জেতার পর দলনায়ক শিমরন হেটমায়ার স্পষ্ট করে বলেন, ‘এই শিরোপা শুধু একটি শিরোপা নয়। এটা আমাদের দ্বীপপুঞ্জের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উজ্জীবনী ওষুধ।’
ভুল বলেছেন কি হেটমায়ার? যে ক্যারিবীয় ক্রিকেট পৃথিবী শাসন করেছে, আজ তারা অতীত। এই শিরোপাই এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদের। সেই স্বপ্ন দেখছেন বোলিং কোচ কোরে কলিমোরও, ‘আমাদের ওখানে জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট এখন অনেক পেছনে। এই শিরোপা তরুণ প্রজন্মকে ক্রিকেট খেলতে উত্সাহ জোগাবে।’
আন্ডার ডগ হয়ে খেলতে নেমে শেষ পর্যন্ত ক্যারিবীয়রা যে বাজিমাত করেছে, তার নায়ক একজন নয়, একাধিক। দুই পেসার আলঝারি জোসেফ ও হোল্ডারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট লিজেন্ড রাহুল দ্রাবিড়, ‘এই আসরে জোসেফ ও হোল্ডারের বোলিং আমাকে মুগ্ধ করেছে।’ ১৯ বছর বয়সী জোসেফ চমকে দেওয়ার মতো গতিতে বোলিং করেছেন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার একটি বলের গতি ছিল ১৪৭ কিলোমিটার ঘণ্টায়। ভারতকে ধসিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা উপহার দিতে অসাধারণ বোলিং করেছেন জোসেফ। সব মিলিয়ে আসরের ৬ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১৩টি। বাংলাদেশের মিরাজ, বাঁহাতি স্পিনার সালেহ আহমেদ শাওন ও সাইফুদ্দিন চমত্কার বোলিং করেছেন। অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন ৬ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। শাওনের উইকেট ১২টি। তিনজনেরই বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
সম্ভাবনা রয়েছে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তর। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল ৬ ম্যাচে রান করেন ২৫৯। টুর্নামেন্ট সেরা মিরাজ ২৪২ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ১২টি। এসব ক্রিকেটারের মধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ দেখছেন যুবদলের উপদেষ্টা কোচ স্টুয়ার্ট ল, ‘আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই অসাধারণ মানসিকতার। তাদের মধ্যে সবাই হয়তো জাতীয় দলে খেলবেন না। কিন্তু বেশ কয়েকজন আছেন, যারা অনেকদূর যাবেন।’
রানার্সআপ ভারতের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আলো ছড়িয়েছেন। আইপিএলে ১ কোটি ৯০ লাখ রুপিতে বিক্রি হওয়া রিশাভ পান্ত দেখিয়েছেন আগ্রাসী মেজাজের ব্যাটিং। ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন সরফরাজ খান। ৬ ম্যাচে ৫টি হাফসেঞ্চুরি করা সরফরাজের রান ৩৫৫। আসরে একাই তিন তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ডের জেমস বার্নহাম। তিন সেঞ্চুরিতে তার স্কোর ৪২০।
কাউন্টি ক্রিকেট খেলা বার্নহাম খেলতে পারেন ইংল্যান্ড দলে। ভারতের বাঁহাতি স্পিনার দাগার ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১১টি। ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার স্প্রিঙ্গার ২৮৫ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৭টি। পাকিস্তানের আলোচিত পারফরমার হাসান মহসিন। ৬ ম্যাচে এক সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ২৯৩। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক আসালাঙ্কা ২৭৬ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৫টি।
১৬ দলের ২৪০ ক্রিকেটারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ভবিষ্যতে ক্রিকেটবিশ্ব শাসন করবেন। কারা করবেন এ জন্য হয়তো খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। বিডি প্রতিদিন
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস