মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:৪১:৪৭

‘টাইগাররাও এখন পারে, টি-২০ বিশ্বকাপে চমক দিতে’

‘টাইগাররাও এখন পারে, টি-২০ বিশ্বকাপে চমক দিতে’

ক্রিকেট ভাষ্যকার ও সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার: এক সময়ের গুরুত্বহীন দল বাংলাদেশ এখন তারা দারুণ ফর্মে। ওয়ার্ল্ড টুয়েন্টি২০-তে পারবে চমক দিতে? বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স। শীর্ষ কোনও একটা টীমকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা যদি কারও থাকে সেটা হল বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৫র বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। ভারতকে তো কোয়ার্টার ফাইনালে অত্যন্ত বেগ পেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে হারাতে। রোহিত শর্মার ওই বিতর্কিত ক্যাচ – যেটাতে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার নো বলটা ডাকেন নি –যদি নো বলটা দিতেন, তাহলে ম্যাচ যে কোনও দিকে যেতে পারত!

তারপরে গত জুন মাসে ভারতকে তারা হারায়, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায়। সব মিলিয়ে তাদের এখন যা ফর্ম, তাতে বাংলাদেশের ওপরে বাজী ধরাই যায়। কয়েকজন নতুন প্লেয়ার বাংলাদেশ টীমে আসাতে দলটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার–এরা ফ্রি ফ্লোয়িং ক্রিকেট খেলছে।

বাংলাদেশের কাছ থেকে একটা দুটো চমক আশা করাই উচিত। সেটাতে টুর্নামেন্ট বরং জমে যাবে। বাংলাদেশের এই দুর্দান্ত ফর্ম – কীভাবে হল? তাদের ক্রিকেট খেলাটা বদলে গেল কীভাবে যেটা ওদের খেলাটাকে পাল্টে দিয়েছে, সেটা হল ওদের আত্মবিশ্বাস।

ওদের মধ্যে যে প্রতিভা ছিল না, হঠাৎ করেই সবাই প্রতিভাধর খেলোয়াড় হয়ে গেল, তা তো নয়, সেটা হয় না। কিন্তু এক ঝাঁক প্লেয়ার খেলোয়াড় এসেছেন – যারা একসঙ্গে তাদের কেরিয়ারের শিখরে রয়েছেন - তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, রুবেল হুসেইন।

এই এক ঝাঁক ভালো খেলোয়াড় – বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে আমরা যে কোনও টীমকে যখন তখন হারাতে পারি। এই যে ‘আমরাও পারি’ ধারণাটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়া – এটাই আমার মনে হয় আগেকার বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেটের মধ্যে ফারাকটা গড়ে দিয়েছে।

যেমন রুবেল হুসেইন – উনার বলে আগেও পেস ছিল এখনও আছে। কিন্তু এখন উনি বিশ্বাস করেন যে উইকেট নিতে পারবেন।
সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল নিয়মিতভাবে বাংলাদেশকে শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করিয়ে দিতে পারছেন, মুশফিকুর ম্যাচ শেষ করছেন, সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন।

সব মিলিয়ে টীমটার ব্যালান্স আর ওই আত্মবিশ্বাস – এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পালটিয়ে দিয়েছে। শুধুই কি আত্মবিশ্বাস না আরও কিছু আছে বাংলাদেশের এখনকার খেলার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তো একটা দিক।ফর্ম, ক্ষমতা, দক্ষতা এগুলোর সঙ্গে যদি আত্মবিশ্বাসটা থাকে – যেমন টি২০তে ২০০ রান তাড়া করার ক্ষমতা যে আছে, সেটা কি উনারা নিজে বিশ্বাস করেন?

আমার ধারণা এই বাংলাদেশ টীম সেটা বিশ্বাস করে। মানসিকভাবে কি আপনি বিশ্বাস করেন যে ভারতের মাটিতে ভারতকে হারাতে পারবেন? এই বাংলাদেশ টীম সেটা বিশ্বাস করে নিজেরা। আগে এটাই তারা বিশ্বাস করত না।

প্রতিভা তো আগেও ছিল। সাকিব আল হাসান তো নতুন ক্রিকেট খেলছেন না, দশ বছর ধরে তিনি খেলছেন। তামিম ইকবাল ২০০৭ এর ওয়ার্ল্ড কাপেও ভারতকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু একসঙ্গে সব প্লেয়ার কন্ট্রিবিউট করা আর একজন দুজন কন্ট্রিবিউট করার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।

একজন দুজন ভাল খেললে ম্যাচ জেতা যায় না। বাংলাদেশের আগে সেই সমস্যাটা ছিল। এখন কোনও একটা দিনে বাংলাদেশের হয়ে ছ-সাত জন ভাল খেলে দিচ্ছেন।ওই ছ-সাতজনের মিশ্রণে টীমটা এই জায়গায় এসেছে। এই সবগুলো ফ্যাক্টর মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটা ভাল টীমে পরিণত করেছে।

মুস্তাফিজুরকে নিয়ে গোঁড়ায় একটা চমক ছিল। কিন্তু এখন তাকে সবাই স্টাডি করে নিয়েছে। গত বছর জুনে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে যে পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছিলেন, এবারও সেটা পারবেন কি? মুস্তাফিজুর রহমান যেভাবে প্রায় একাই ভারতকে সিরিজ হারিয়ে দিয়েছিলেন, সেটা ভাবা যায় না।

বিরাট বড়ো বাংলাদেশী সমর্থকও এতটা আশা করেন নি যে ভারত বাংলাদেশে গিয়ে ওইভাবে পর্যুদস্ত হয়ে ফিরে আসবে, কোনও ভারতীয় সমর্থক তো ভাবেন-ই নি। আর মুস্তাফিজুর রহমান চার, পাঁচটা করে উইকেট নিয়ে চলেছেন।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তো উনাকে ধরতেই পারেন নি কেউ। বল কোন দিকে যাবে, স্লোয়ার বল কোনদিকে যাবে, সুইং হবে কী না, এই যে ভেরিয়েশন, উনার অ্যাকশন – কোনও কিছুই ধরা যায় নি। আমি আজিন্থা মেন্ডিসের উদাহরণ দেব। মেন্ডিস যখন ২০০৮ এ আসেন, প্রথম কয়েকটা সিরিজ উনাকে ধরাই যায় নি – নিয়মিতভাবে ৫-৬ টা করে উইকেট নিয়ে নিচ্ছিলেন।

কিন্তু এটা টেকনোলজির যুগ – তারপরে কিন্তু সবাই ধরে নিলো উনাকে। কোনটা ক্যারম বল, মিস্ট্রি বল কোনটা। মুস্তাফিজুর রহমানেরও সেই সমস্যাটা হবে। আমি নিশ্চিত সবাই উনার বোলিং অ্যাকশন স্টাডি করে নিয়েছে, ভিডিও দেখেছে – তাই সবাই জানে যে উনি কী ধরনের বল করবেন।

তাই এবার উনার পক্ষে ব্যাপারটা একটু কঠিন হবে। তবে এটাই তো চ্যালেঞ্জ। তিনি সত্যিই কত ভাল বোলার সেটা বোঝা যাবে দ্বিতীয় বছরে । এবারেও যদি তিনি ভাল বল করতে পারেন, তবেই বোঝা যাবে যে তাঁর সত্যিই প্রতিভা রয়েছে কী না।গোঁড়ায় যে চমক দিতে পেরেছিলেন, সেটা শুধুই চমক ছিল কী না, সেটা এবার প্রমাণ হবে।

বাংলাদেশের সেরা তিনজন প্লেয়ার কারা?

একজন বোলার, একজন মিডল অর্ডার এবং একজন ব্যাটসম্যানকে আমি এর মধ্যে ধরব। ব্যাটসম্যান হিসাবে আমি বলতে বাধ্য যে তামিম ইকবালের ওপরে বাংলাদেশ অনেকটা নির্ভরশীল। সৌম্য সরকার আর তিনি দুজনে মিলে বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুর দিকটা শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করিয়ে দেন।

লোকে মুশফিকুর রহমানের কথা বলেন না ঠিকই, কিন্তু আমি বলব মিডল অর্ডারে তাঁর নাম। কারণ তাঁর বড় শট খেলার ক্ষমতা আছে। উনাকে দেখে বোঝা যায় না যে কত জোর আছে উনার। আর বোলিংয়ে আমি রুবেল হুসেইনকে মাথায় রেখেও সাকিব আল হাসানকে সেরা তিনে রাখব। বিশেষত উনার আই পি এলো খেলার অভিজ্ঞতা, উনার টি২০ খেলার অভিজ্ঞতার জন্যই বাংলাদেশের বোলিংয়ে উনি একটা সম্পদ।-বিসিবি
১৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে