বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৬:৫৬:০৯

ধোনির টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক সেই যোগিন্দর শর্মা কোথায়?

ধোনির টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক সেই যোগিন্দর শর্মা কোথায়?

স্পোর্টস ডেস্ক : যোগিন্দর শর্মাকে আজ আর কেউ মনে রাখেননি। সংবাদাপত্রেও তার নাম আজকাল দেখা যায় না। প্যাড জোড়াও তুলে রেখে দিয়েছেন আলমারিতে। এক বুক অভিমান নিয়ে হরিয়ানার অলরাউন্ডার বলছিলেন, ‘‘সবাই দূরে সরে যাক, যোগিন্দর শর্মা একা জীবন কাটাতে শিখে নিয়েছে।’’

অথচ এমন তো হওয়ার কথা একেবারেই ছিল না। ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ওভারের নায়ক যে তিনি। মিসবা উল হককে ওভাবে ফিরিয়ে না-দিলে, তিনি তো ভিলেন বনে যেতেন দেশে। প্রথমবার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিটাও উঠত না মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাতে। দেশে তারকা ক্রিকেটাররা নখদাঁত বের করতেন রাঁচির রাজপুত্রর দিকে। সে বার তো তারকাদের দেশে ফেলে রেখেই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেমেছিল ভারত। ফাইনালের ফাইনাল ওভারে যোগিন্দর হতাশ করেননি তার অধিনায়ককে, তার দেশকেও।

এত কিছুর পরেও কী পেলেন যোগিন্দর? নাম পেয়েছেন? যশ? তার কথা এখন আর কি কেউ উচ্চারণ করেন ধোনি-যুবির সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে?যোগিন্দর শর্মা তো হারিয়েই গিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্র থেকে। নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে অনুষ্ঠিত ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অব্যবহিত পরে হরিয়ানা সরকার ২১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছিল যোগিকে। ডিএসপি-র চাকরিও পান তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট থেকে কী পেলেন বিস্মৃতপ্রায় এই নায়ক?

ধোনির যোগি বলছেন, ‘‘আমি কাউকে দোষ দেব না। ভাগ্য হয়তো আমার সহায় ছিল না। বিশ্বকাপের পরে আমি আর দেশের হয়ে খেলিনি। ২০০৮-এ আমার অস্ত্রোপচার হল। তার পরে মাঠে নেমে আমি ভাল পারফরম্যান্সও করি। কিন্তু জাতীয় দলে ডাক পাইনি। ২০১১-য় আমার পথ দুর্ঘটনা হল। সাড়ে উনিশ মাস আমাকে যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। মাঠে নামতে পারতাম না। চিকিৎসক বলে দিয়েছিলেন, খেলতে আর পারব না। আমি কিন্তু ফিরে এসেছিলাম। রনজিতে নেমেওছিলাম।’’ তার পরে? ক্রিকেটকেই বিদায় জানাতে হল। ব্যাট-প্যাডও রাখলেন তুলে। কী কারণে জাতীয় দলে তাকে আর ডাকা হল না, তার উত্তর এখনও খোঁজেন যোগিন্দর। বলেন, ‘‘কাউকে আমি দোষ দিতে চাই না। নির্বাচকরাই এই ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।’’

এবার ঘরের মাঠে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতীয় দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনেকেই রয়েছেন এবারের দলে। তিনি, যোগিন্দর শর্মা মাঠের বাইরে বসে দেখবেন দেশের খেলা। ভারতের সম্ভাবনা কতটা? যোগির সপ্রতিভ জবাব, ‘‘বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা বেশি ভারতেরই। দলের ভারসাম্য দারুণ। ম্যাচ জেতানোর মতো একাধিক ব্যাটসম্যানও রয়েছে দলে। তার উপরে বিশ্বকাপ হচ্ছে দেশের মাটিতে। এর পুরোদস্তুর ফায়দা ভারত নেবে। মিলিয়ে নেবেন।’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন যোগিন্দর।

আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না যোগিন্দরের পরিবারের। তার বাবা পানের দোকান চালাতেন। ছেলে স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হবেন। ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ওভার যোগিন্দরকে অমর করে রাখবে। শেষ ওভারের বল ধোনি তুলে দিয়েছিলেন তাঁর হাতে। তার পরে? যোগিন্দর বলছিলেন, ‘‘মিসবা দারুণ ব্যাট করছিল। ওর সঙ্গে ক্রিজে ছিল মহম্মদ আসিফ। প্রথমে ব্যাট করে আমরা ১৫৭ রান তুলেছিলাম। শেষের দিকে ম্যাচটা বেশ জমে যায়। ম্যাচ জেতার জন্য শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। প্রথম বলটাই আমি ওয়াইড করি। পরের বলে রান দিইনি মিসবাকে। তার পরের বলে মিসবা আমাকে তুলে ফেলে দিল গ্যালারিতে। তৃতীয় বলটা যখন করতে যাচ্ছি, তখনই বুঝেছিলাম মিসবা অন্যরকম কিছু শট খেলবে। স্কুপ করল মিসবা। লুফে নিল শ্রীসন্থ।’’ ধোনির হাতে প্রথমবার ওঠে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

ওই এক ওভারই যোগিন্দরকে নায়ক বানিয়ে দেয়। ওই এক ওভারের জন্যই এখনও তিনি পাকিস্তানে খলনায়ক। আর তার পরের ইতিহাস? চোখে জল আনার মতো। যোগিন্দর শর্মাকে আর কেউ মনেই রাখলেন না। তাই তো তিনি বলতে পারেন, ‘‘একা জীবন কাটাতে আমি শিখে নিয়েছি।’’ -এবেলা

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে