ইশতিয়াক পারভেজ : সাকিব আল হাসান আর দেশে ফিরতে পারবেন না! আপাতত ঘটনা যা ঘটছে এই বাস্তবতা না মেনে উপায়ও নেই। তবে এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও আছে।
বড় একটি অংশের ধারণা মামলা ও জনরোষ থেকে নিরাপত্তা দু’টি বিষয় সাকিবের দেশের ফেরার পথে বড় বাধা। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিজেদের অবস্থান না পরিবর্তন করে তাহলে সাকিবের দেশে ফেরার আশা ছেড়েই দিতে হবে।
তবে সরকারের একটি সূত্রে জানা গেছে সাকিবকে নিয়ে আছে তাদের দুই ধরনের চিন্তা। একটি হচ্ছে প্রকাশ্যে না হলেও তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হবে তার মামলা নিয়ে সরকারের কোন কিছু করার নেই। আইন মেনে তাতে যা হয় তা মেনে নিতে হবে। কারণ মামলা থেকে তাকে ছাড় দিলে অন্যদের জন্যও এটি উদাহরণ হয়ে যাবে। তার মানে মনে মনে সাকিব যে আশায় আছেন যে তাকে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে সেই আশাতে গুড়েবালি।
আরেকটি চিন্তাতে থাকতে পারে সাকিবের জন্য দুটি চমক। তাকে খেলার সুযোগ দেয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। আর তার নাম রাখা হবে বিপিএলের ড্রাফটেও। বিসিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যদি ১৪ই অক্টোবর বিপিএলের ড্রাফটের তালিকায় সাকিবের নাম থাকে তাহলে তাকে অবসর নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও।
জানা গেছে সেটি হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ভুল হয়েছে বলে বক্তব্যও দিতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মুখ খুলতে রাজি হননি।
সাকিবকে নিয়ে বিসিবি’র দিক নিদের্শনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিপিএলের ড্রাফটে তাকে রাখা হবে কিনা সেটি নিয়ে এখনো আলাপ হয়নি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দল হবে সেটি নিয়ে এখনো বিসিবি কোনো দিক নির্দেশনা দেয়নি।’
বর্তমানে সাকিব আছেন যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারের সঙ্গে। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে সেখান থেকেই তিনি দেশে ফিরে এসে টেস্ট খেলার বিষয়ে লবিং করছেন। এ জন্য তিনি কথা বলতে রাজি আছেন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও।
জানা গেছে তার আগামী ১৪ বা ১৫ই অক্টোবর দেশে ফেরার ভাবনা আছে। শুধু সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। মূলত সাকিব চাইছেন শেষ টেস্ট খেলতে পারলে তার দেশে থাকা ও আসা যাওয়া নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সেটি হলে তার বিপিএলে খেলতেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সূত্রটি জানায়, ‘সাকিব চাইছেন ১৬ তারিখের আগেই দেশে ফিরতে। যতটা জানি তার সঙ্গে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ হচ্ছে। হয়তো চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে। এটি সত্যি যে সাকিব যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে পারে তাহলে বিপিএলও খেলবে। তবে মূল সমস্যা মামলা নিয়ে।’
শুধু মামলা নয়, সাকিব আল হাসান ও তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বুধবার পাঠানো এক চিঠিতে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দম্পতির নাম, কোম্পানি বা সংগঠনের নামে থাকা সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) ও ডিপোজিট প্লাস স্কিম (ডিপিএস) হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। ক্রিকেটের বাইরে এসে নানা সময় বিভিন্ন ঘটনায় নিজেকে বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি অন্যতম।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে কারসাজিতে জড়িত থাকায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে সাকিব তার অবস্থান পরিবর্তন না করলে দিন দিন তার বিপক্ষে সব অভিযোগের তদন্ত বেগমান করা হবে। তদন্তে প্রমাণ মিললে শাস্তির হাত থেকেও রেহাই পাবেন না।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্যও স্পষ্ট, ক্রিকেটার সাকিবকে নিরাপত্তা দিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক এমপি হিসেবে তার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে ছাড় দেয়া হবে না।-মানবজমিন