স্পোর্টস ডেস্ক : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে চলমান ম্যাচ বন্ধ রাখার ঘটনা অহরহ। বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ঘটেছে এক অন্যরকম ঘটনা। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মাঠের ভেতর দেখা মিললো অজানা উড়ন্ত বস্তুর। আর এই অযাযিত অতিথিদের জন্য ম্যাচ বন্ধ ছিল ১৮ মিনিট।
সেঞ্চুরিয়ানে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যখন প্রোটিয়ারা ব্যাটিং করছিলেন, তখন অনেকগুলো পোকা একসঙ্গে উড়তে থাকায় মাঠ ছেড়ে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন খেলোয়াড়রা। এ সময় কেউ জামা নেড়ে এবং কেউ মাথায় ক্যাপের সাহায্যে পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য পোকার আক্রমণ থামিয়ে খেলা শুরু হয়েছে, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হেরেছে ১১ রানে। ভারতের ২২০ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা থেমেছে ২০৮ রানে।
শুধু এই ম্যাচই যে অনাকাঙ্খিতভাবে থেমে গেছে তা কিন্তু নয়। এমন দৃষ্টান্ত আছে আরও অনেক। বিভিন্ন সময় অদ্ভুত সব কারণে ম্যাচ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত ঠান্ডা, মৃত্যু, যুদ্ধবিমানের আঘাত, বাঘের আক্রমণ এবং গুইসাপ ঢুকে পড়ার কারণেও বন্ধ রাখতে হয়েছিল ম্যাচ। আর এবার ম্যাচ বন্ধ রাখতে হলো পোকামাকড়ের কারণে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের টেস্ট চলাকালীন সময়ে মাঠে ঢুকে পড়েছিল একটি গুইসাপ। আর তার জন্য কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়েছিল ম্যাচটি।
২০১১ সালে একবার বাঘের কারণে বন্ধ রাখতে হয়েছিল ম্যাচ। তবে এটি অবশ্য আসল বাঘ ছিল না। ইংল্যান্ডের রোজ বল নার্সারি গ্রাউন্ডে ইসিবি সাউদার্ন ইলেকট্রিক প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল হ্যাম্পশায়ার ও সাউথ উইলটিস। খেলা চলার সময় এক দর্শক জানান, পাশের গলফ কোর্সে একটি বাঘ দেখা গেছে। সেই দর্শক জুম লেন্স বের করে বাঘের অস্তিত্ব স্বচক্ষেও দেখেছেন। এরপর নিরাপত্তাঝুঁকিতে সব খেলোয়াড় ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। পরে পুলিশ এসে আবিষ্কার করেন, সেটা ছিল মূলত খেলনা বাঘ। বাঘ-কাণ্ডে সেদিন ম্যাচ বন্ধ ছিল ২০ মিনিট।
লর্ডসে আর্মি ও আরএএফের ম্যাচ চলছিল। প্রথমে ব্যাট করে আর্মি ১ উইকেটে ৫৭ রান করার পর জার্মানির একটি যুদ্ধবিমান মাঠের কাছাকাছি চলে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যুদ্ধবিমানটা লর্ডস পর্যন্ত আসেনি। কিন্তু যুদ্ধবিমান আসার খবরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খেলা।
১৯৫২-৫৩ সালের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের ঘটনা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২২৪ রান। দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ড দল ড্রেসিংরুমে যেতে না যেতেই জানতে পারে, রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা গেছেন। রাজার মৃত্যুর শোকে টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা বন্ধ রাখা হয়। এই টেস্টেই ভারত তাদের প্রথম টেস্ট জয় পায়। এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে।
১৯৮৪ সালের শিয়ালকোটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরও এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট–বিশ্ব। সেবার শুধু ম্যাচ নয়, পুরো পাকিস্তান সফরই বাতিল করে দেশে ফেরত যায় ভারত দল। এরপর সর্বশেষ ২০১৪ সালে নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে বন্ধ করে দেওয়া হয় শারজায় পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। এছাড়া ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি বন্ধ রাখা হয়েছিল ড্রেনের পাইপ-এর কারণে। পাইপ ফেটে পানি উপচে ঢুকে পড়েছিল মাঠে।
১৯৯৪-১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাসল কাপে রজার টেলেমাকাসের বলে ছয় মেরেছিলেন ড্যারেল কালিনান। বল গিয়ে পড়ে একটা ক্যালামারি স্কুইড ভাজার প্যানের মধ্যে। বলটা ঠান্ডা করতে লেগে যায় পাক্কা ১০ মিনিট। ‘ফ্রায়েড ক্যালামারি স্টপড প্লে’ এমনটাই তখন লিখেছিল উইজডেন।
২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে মাঠে ঢুকে পড়েছিল মৌমাছি। আতঙ্কে সেদিন মাঠেই শুয়ে পড়েছিলেন খেলোয়াড় ও আম্পায়াররা। কয়েক মিনিট পরই অবশ্য শুরু হয়ে যায় খেলা।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কুয়াশার কারণে বন্ধ করতে হয়েছিল ধর্মশালায় ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ। অতিরিক্ত কুয়াশায় সেদিন ঠিকঠাক কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না খেলোয়াড়েরা। অতিরিক্ত রোদের কারণে ২০১৯ সালে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি বন্ধা রাখা হয়েছিল। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কের ভেন্যুর অবস্থান এমন ছিল যে রোদ সরাসরি ব্যাটসম্যানের চোখে এসে লাগে। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘটেছিল এমন ঘটনা। ফলে বন্ধ রাখতে হয় খেলা।
১৯৯৮ সালে শারজায় মরুঝড়ের কারণে থেমে গিয়েছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। সেদিন ২৮৫ রান তাড়ায় ভারত ব্যাট করার সময় ম্যাচ বন্ধ ছিল ৩০ মিনিট। মাঠে এত ধুলা উড়ছিল যে একপর্যায়ে খেলোয়াড়দের দৌড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল।