শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০১:২৪

এবার তোপের মুখে নরেন্দ্র মোদি, রক্ত না শুকাতেই আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছেন!

এবার তোপের মুখে নরেন্দ্র মোদি, রক্ত না শুকাতেই আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছেন!

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে খোলা চিঠি লিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপে খেলা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সঞ্জয় রাউত। তিনি উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিব সেনার রাজ্যসভার সাংসদ ও মুখপাত্র। সরকারি এমপির প্যাডে ইংরেজিতে লেখা চিঠির পাশাপাশি চিঠির সফট কপিও তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি ট্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।

শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে একহাত নেন। রাউত লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পহেলগাঁও হামলায় নিহত ভারতীয়দের রক্ত এখনো শুকায়নি, তাদের পরিবারের কান্না থামেনি। এর মধ্যেই আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন! এটা অমানবিক।”

তিনি আরও লিখেছেন, “খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অনুমতি দিয়েছে। এটা গোটা দেশের মানুষের জন্য গভীর কষ্টদায়ক। এই এশিয়া কাপ শুরু হবে ৯ সেপ্টেম্বর, সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে ১৪ সেপ্টেম্বর, দুবাইয়ে। এরপর সুপার ফোরে আবার দেখা হতে পারে। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ায় এবার এশিয়া কাপ হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।”

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে রাউত প্রশ্ন তোলেন, “আপনি নিজেই বলছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ কীভাবে সম্ভব? পহেলগাঁও হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী, যারা ২৬ জন নারীর সিঁদুর মুছে দিয়েছে। আপনি কি তাদের মায়েদের ও বোনদের অনুভূতির কথা ভেবেছেন? ট্রাম্প কি হুমকি দিয়েছেন- ক্রিকেট না খেললে বাণিজ্য বন্ধ হবে? আপনি নিজেই বলেছিলেন, রক্ত আর পানি একসঙ্গে চলতে পারে না। তাহলে এখন রক্ত আর ক্রিকেট একসাথে চলবে?”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অনলাইন বেটিং আর জুয়া, যেখানে বিজেপির অনেক নেতা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। গুজরাটের জয় শাহ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে, যিনি এক সময় বিসিসিআই সেক্রেটারি ছিলেন, এখন আইসিসির চেয়ারম্যান। তাহলে কি বিজেপির কোনও আর্থিক লাভ লুকিয়ে আছে এই ম্যাচে?”

রাউতের মতে, “পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুধু শহীদদের আত্মত্যাগের অবমাননা নয়, বরং কাশ্মীরের জন্য প্রাণ দেয়া প্রত্যেক সেনা সদস্যকে অপমান করা। এমনকি বিজেপিরই প্রয়াত নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জিকেও। ম্যাচগুলো হচ্ছে দুবাইয়ে। যদি মহারাষ্ট্রে হতো, তাহলে বাল ঠাকরের শিব সেনা তা হতে দিত না। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলাকে হিন্দুত্ব ও দেশপ্রেমের ওপরে রাখায় আপনি সাধারণ মানুষের আবেগকে অশ্রদ্ধা করছেন। শিবসেনা (উদ্ধব বলাসাহেব ঠাকরে) এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করছে।”

শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাউত আরও বলেন, “ক্রিকেট ম্যাচে কে বিনিয়োগ করছে? কার ব্যবসা এটা? ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সবচেয়ে বড় বেটিং হয় গুজরাট, রাজস্থান ও মুম্বাই থেকে। অনলাইন জুয়ার বড় অংশ গুজরাট থেকেই হয়। তাহলে কি এই জুয়াড়িদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে? জয় শাহ এখন ক্রিকেটের মাস্টারমাইন্ড, তার বাবা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাহলে জাতীয় আবেগ রক্ষা করার দায় আমাদের, আর তাদের সন্তানেরা পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ অনুমোদন করবে? এটাকে দেশপ্রেম নয়, বিশ্বাসঘাতকতা বলেই আমি মনে করি।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “দিল্লিতে কোনও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হবে না। হলেও আমরা তা বাধা দিতাম, প্রধানমন্ত্রীকে থাপ্পড় দিতাম (প্রতীকীভাবে)। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন এই ম্যাচ মেনে নেবে না দেশ। আপনি নিজেই তো বলেছেন, পাকিস্তান নাকি আত্মসমর্পণ করেছে। তাহলে এখন ক্রিকেট ম্যাচ খেলে আপনি কীভাবে আত্মসমর্পণ করছেন?”

এদিকে, কংগ্রেসও এই ইস্যুতে সরকারকে কটাক্ষ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “যদি সত্যিই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে, যেমন মোদি বারবার বলেছেন, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচ কীভাবে হচ্ছে? ওদের পানির সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে, বাণিজ্য বন্ধ, এমনকি চিকিৎসা ভিসাও বন্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশছাড়া করা হয়েছে। তাহলে এখন হঠাৎ করে ক্রিকেট ম্যাচ কেন?”

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে