সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৪:১৬

ব্যাট কেনার টাকা না থাকা ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলেই ভারতের শিরোপার নায়ক

ব্যাট কেনার টাকা না থাকা ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলেই ভারতের শিরোপার নায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতে ক্রিকেটকে অনেকটা ধর্মের চোখে দেখা হয়। যেখানে শিশু-কিশোরদের বড় একটা অংশই জীবনে একবার হলেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তবে বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে শীর্ষ পর্যায়ে ক্রিকেটার হওয়া সহজ ব্যাপার না। আর একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলে থেকে ক্রিকেটার? সেই যাত্রাটা আরও কঠিন। তবে সেই কঠিন ব্যাপারকেই বাস্তবে রুপ দিয়েছেন তিলক ভার্মা। যার ব্যাটে ভর করে আরও একবার এশিয়াসেরা হয়েছে ভারত।

হায়দরাবাদ থেকে উঠে এসেছেন তিলক। ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দরাবাদের ব্যাটারদের আলাদা কদর রয়েছে। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণরা উঠে এসেছে সেখান থেকেই। তিলকের সাফল্যের গল্প প্রায় সবাই জানলেও ক্রিকেটার হয়ে ওঠার নেপথ্যে সংগ্রামের কথা জানেন না অনেকেই। একটা সময় ব্যাট কেনার টাকা পর্যন্ত ছিল না তার পরিবারের। কীভাবে তাহলে তিলকের জীবনের মোড় ঘুরল? 

তিলকের বাবা নাম্বুরি নাগারাজু পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা গায়ত্রীদেবী গৃহবধূ। এমন পরিবার থেকে ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রাটা কখনই সহজ নয়। কিন্তু সেই স্বপ্নটা দেখেছিলেন নাগারাজু। সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য কোনও রকম গাফিলতি করেননি তিনি। সেই আবেগকে ছেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। হয়তো সেই কারণে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট অন্তপ্রাণ ছিল তিলক।

বাবার দেওয়া প্লাস্টিকের ব্যাট থেকে স্বপ্ন বোনা শুরু। সেই ব্যাটই তখন স্বপ্নের উইলো ব্যাট। কারণ, সেই সময় ব্যাট কেনার মতো টাকা ছিল না তিলকের। সেই ব্যাট নিয়েই ঘুমাতে যেতেন তিলক। সেই তিলকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ছোটবেলার কোচ, সালিম বায়াশ। ১১ বছরের তিলকের টেনিস বলের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে সম্ভাবনা দেখেছিলেন তিনি। সালিমই তিলককে নিয়ে যান নিজের লিগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।

সেই থেকে শুরু তিলকের প্রথাগত ক্রিকেট সাধনা। বাড়ি থেকে অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল ৪০ কিলোমিটার। প্রতিদিন এতদূর যাওয়ার খরচ বহনের সামর্থ্য পর্যন্ত ছিল না তিলকের পরিবারের। সালিমই সেই দায়িত্ব নেন। নিজের স্কুটারে প্রতিদিন তিলককে নিয়ে যেতেন, আবার প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দিতেন। খাবার থেকে ক্রিকেটের সরঞ্জাম - তিলককে সবই দিতেন সালিম। এরপর ভাগ্যের চাকা ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে।

২০১৮-১৯ মৌসুমে হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিলকের অভিষেক হয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আইপিএলে মুম্বাইয়ের হয়ে নজর কাড়ার পর সুযোগ পান ভারতীয় দলে। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। তার ব্যাটিং দেখে নিজের তিন নম্বর জায়গা তাকে ছেড়ে দেন অধিনায়ক সূর্য।

সেই তিলকই এখন ভারতের নায়ক। বাড়ি চন্দ্রায়ণ গুট্টা থেকে ভোর ৫টায় অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার পথে মাঝেমাঝে কোচ সালিমের বাইকে ঘুমিয়ে পড়তেন তিলক। সেই ক্রিকেটার এখন ভারতের স্বপ্নযাত্রার নতুন নায়ক। যার ব্যাটে ভর করেই আরেকটি শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে