স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের মতো উচ্চচাপের ম্যাচে একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্তই পাল্টে দিতে পারে পুরো ইতিহাস। সেই ঝুঁকি আরও কমাতে ২০২৬ বিশ্বকাপে ভিএআর (VAR) প্রযুক্তিতে বড় ধরনের নতুন ফিচার আনার কথা ভাবছে আইন–নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইএফএবি।
বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একটি ভুল কর্নার বা এক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে পুরো ম্যাচের গতিপথ—এমন উদাহরণ আছে বহুবার। তাই ‘মানবিক ভুল’-এর সম্ভাবনা আরও কমাতে ভিএআর ব্যবস্থায় নতুন ফিচার যোগ করার উদ্যোগ নিয়েছে ফুটবলের আইন–নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি)।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এবং দ্য গার্ডিয়ান–এর তথ্য অনুযায়ী, ভিএআর প্রোটোকলে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট সংশোধন নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে সংস্থাটি। সাধারণত বড় টুর্নামেন্টের আগে ছোট প্রতিযোগিতায় নতুন নিয়ম পরীক্ষা করা হয়। তবে এবার সেই ধারার বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর আয়োজিত ২০২৬ বিশ্বকাপেই সরাসরি পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ভিএআর ব্যবস্থার প্রয়োগ হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নতুন ফিচারগুলো কী হতে পারে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি আইএফএবি। তবে ফুটবলে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও নিখুঁত ও দ্রুততর করতে এই পরিবর্তনগুলোই বড় টুর্নামেন্টে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্নার না গোলকিক—ভিএআরের নতুন ভূমিকা
বর্তমানে কর্নার কিক নাকি গোলকিক হবে—এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি মাঠের রেফারির ওপর নির্ভরশীল। প্রস্তাবিত নতুন নিয়মে, এমন সিদ্ধান্তে সন্দেহ তৈরি হলে ভিএআর হস্তক্ষেপ করতে পারবে। বিশেষ করে সেই সিদ্ধান্ত থেকে যদি সরাসরি গোলের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তাহলে রেফারিকে ভুল থেকে রক্ষা করাই হবে এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য।
ড্রয়ের আগে জেনে নিন ২০২৬ বিশ্বকাপের নতুন সব নিয়ম
বল পুরোপুরি লাইনের বাইরে গেছে কি না
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অবজেকটিভ রিভিউ’। যেমন—বল কি পুরোপুরি শেষ লাইন পেরিয়েছে, কিংবা শেষবার কে বল স্পর্শ করেছে—এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভিএআর আরও সূক্ষ্মভাবে সহায়তা দিতে পারে। এগুলো খেলার পুনরারম্ভের ওপর প্রভাব ফেলে, আর সেখান থেকেই অনেক সময় গোলের মতো বড় ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
ভুল সিদ্ধান্ত ঠেকাতে ‘সেফটি নেট’
আইএফএবি সূত্রগুলোর মতে, এসব পরীক্ষা চালুর মূল লক্ষ্য হলো একটি ‘সেফটি নেট’ তৈরি করা—যাতে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভুলভাবে দেওয়া কর্নার বা অনুরূপ সিদ্ধান্ত সরাসরি ফলাফলে প্রভাব না ফেলে। নকআউট পর্বে কিংবা ফাইনালের মতো ম্যাচে যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য, সেখানে এই বাড়তি সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
শঙ্কাও আছে—থামবে কি খেলার গতি?
তবে সব পক্ষ একমত নয়। রেফারিদের একটি অংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, নতুন ভিএআর প্রোটোকল ম্যাচের গতি আরও ধীর করে দিতে পারে। আগেই ভিএআর নিয়ে সময় নষ্টের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে আরও সিদ্ধান্ত পুনঃপর্যালোচনার সুযোগ দিলে খেলা অতিরিক্ত থেমে যেতে পারে—এই বিতর্ক এখনই শুরু হয়ে গেছে সমর্থক, কোচ ও ফুটবলারদের মধ্যে।
মার্চেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবে রূপ দিতে হলে আইএফএবির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন লাগবে। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত সেই সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে—২০২৬ বিশ্বকাপে ভিএআর কি সত্যিই নতুন রূপে দেখা যাবে, নাকি পরিকল্পনাই থাকবে কাগজে-কলমে।
ফুটবলের ইতিহাসে প্রযুক্তির ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রশ্ন একটাই—এই নতুন ভিএআর কি খেলাকে আরও ন্যায্য করবে, নাকি বিতর্কের নতুন অধ্যায় খুলে দেবে? উত্তর মিলবে বিশ্বকাপের আলো জ্বলার পরই।