বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬, ১১:২৪:০৮

সাতক্ষীরার ছেলে সাত টিমের নজরে : ইন্ডিয়ান টাইমস

সাতক্ষীরার ছেলে সাত টিমের নজরে : ইন্ডিয়ান টাইমস

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের বিস্ময় বালক থেকে বিগ ব্যাশের হটকেক৷ এবং অবশ্যই আইপিএল নাইনে সাড়া ফেলে দেওয়া মুখ! কে? কে আবার, সাতক্ষীরার সাত রাজার ধন মানিক মুস্তাফিজুর রহমান৷

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের বাঁ হাতি পেসার নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়াতেও৷ শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটা সত্যি, যে বিগ ব্যাশের সাত টিমের নজরেই রয়েছেন সাতক্ষীরার মুস্তাফিজুর!

আট টিমের অস্ট্রেলিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগে এখনও পর্যন্ত মেলবোর্ন স্টারস দু'জন বিদেশির কোটা পূর্ণ করেছে৷ নিয়েছে কেভিন পিটারসেন ও লুক রাইটকে৷ বাকি সব টিমই কম-বেশি খোঁজ রাখছেন মুস্তাফিজুরের ব্যাপারে৷ এঁদের মধ্যে আবার এক কদম এগিয়ে তিন টিম- মেলবোর্ন রেনেগেডস, সিডনি সিক্সার্স ও সিডনি থান্ডার্স৷

অস্ট্রেলিয়া সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, মুস্তাফিজুরকে পাওয়ার ব্যাপারে পাল্লা ভারি মেলবোর্ন রেনেগেডস৷ কারণ সানরাইজার্স হায়দরাবাদে মুস্তাফিজদের কোচ টম মুডি আবার এই টিমের ডিরেক্টর৷

ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট মুস্তাফিজুরকে নিয়ে উত্তাল হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বাংলাদেশের অনেক পেসার তুলে আনার নেপথ্যচারী সারওয়ার ইমরান৷ একই সঙ্গে ভারতের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফল হওয়া নিয়েও তি‌নি বেশ আশাবাদী৷ ঢাকা থেকে ফোনে বললেন, 'মুস্তাফিজুরের ডেলিভারিগুলো পড়তে অসুবিধে হয় ব্যাটসম্যানদের৷ কী ভাবে কেকেআর ম্যাচে রাসেলকে বোল্ড করেছিল, মনে আছে? আর এই ডেলিভারিগুলো ও নিজের প্রতিভা থেকে করে, শুধু উইকেটের সাহায্য থেকে নয়৷ তাই যে কোনও জায়গায় খেললেই সফল হবে ও৷'

বাংলাদেশের নেট বোলার থেকে উঠে আসা মুস্তাফিজুরের লড়াইয়ের দিনগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন সারওয়ার৷ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালের অন্য দুই নামী পেসার রুবেল হোসেন, তাস্কিন আহমেদের তুলে নিয়ে আসার কারিগর তিনি৷

বাংলাদেশ ক্রিকেট মহলে কারও কারও প্রশ্ন, এই ক'দিনের খ্যাতির এভারেস্টে উঠে হঠাত্‍ মাথা ঘুরে যাবে না তো মুস্তাফিজুরের? সারওয়ারের সাফ কথা, 'আমি বলব, কোনও দিকে মন না দিয়ে নিজের বোলিংটায় ফোকাস করে যাক মুস্তাফিজুর৷ নিজের শক্তিগুলোর উপর ভর করেই বল করে যেতে হবে ওকে৷'

মুস্তাফিজুরের মাথা ঘুরুক, অবশ্য প্রশংসা থামছে না সানরাইজার্সের আদরের 'ফিজ'-এর৷ সুনীল গাভাসকর, যিনি পান থেকে চুন খসলে কমেন্ট্রিতে ক্রিকেটারদের তুলোধোনা করেন, তাঁর মনেও আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর৷ আইপিএল নাইনে এখনও পর্যন্ত সানির পছন্দের তিন পেসার হলেন, আন্দ্রে রাসেল, মিচেল ম্যাকক্লেনাঘান ও মুস্তাফিজুর৷ বেগুনি টুপির মালিক রাসেলকে (১৪) তাড়া করছেন মুস্তাফিজুর ও ম্যাকক্লেনাঘান৷ দু'জনেরই ১৩ উইকেট৷

এখানে শেষ হলে ল্যাটা চুকেই যেত৷ লাজুক হাসির বাঙালি ঘাতককে উপেক্ষা করার মতো কোনও নাম এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি৷ সানরাইজার্স টিমে তাঁর সতীর্থ মোজেস অঁনরিক্সের মতে মুস্তাফিজুর হল, 'লিটল জিনিয়াস'৷

অভিজ্ঞ ও সফল আশিস নেহরাও থেমে থাকেননি৷ উল্টে বছর ২০-র পেসারকে নিয়ে তাঁর গলায় বিশ্বকাপের সময় ধরা পড়েছিল মুগ্ধতা৷ নেহরা বলেছিলেন, 'মুস্তাফিজুরের থেকে স্লোয়ারগুলো শিখব৷'

শুধু স্লোয়ার বললে বোধহয় কিছুই বলা হয় না৷ হরেকরকম স্লোয়ার উঠে আসছে তাঁর রহস্য ডেলিভারিতে৷ সঙ্গে টানা ইয়র্কার, কাটার দেওয়ার ক্ষমতা৷ স্লোয়ার বাউন্সার, ওয়াইড ইয়র্কারের মতো ইনোভেটিভ ডেলিভারিগুলো যেন জলভাত৷ আবার গতিও বেশ ভালো৷ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার৷ স্লোয়ার ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার৷

মুস্তাফিজুরের উত্থানের গল্প লিখতে গেলে মাশরাফি মোর্তাজার কথা বলতেই হবে৷ বাংলাদেশ টিমে মাশরাফির নেতৃত্বের আগে পাকিস্তান, পরে ভারতকে কুপোকাত করেছিলেন মুস্তাফিজুর৷ সেই মাশরাফি এক সাক্ষাত্‍কারে জানিয়েছেন, বৈচিত্রটাই মুস্তাফিজুরের সম্পদ৷ বলেছেন, 'রিস্ট অ্যাকশনের কারণেই মুস্তাফিজুরকে পড়া কঠিন ব্যাটসম্যানদের পক্ষে৷'

একা মাশরাফি নন, আইপিএলে থাকা মুস্তাফিজুরের এক মাত্র বাংলাদেশি সতীর্থ সাকিব আল হাসানও আগলাচ্ছেন দেশের বিরল প্রতিভাকে৷ টুর্নামেন্ট চলাকালীন মুস্তাফিজুরকে কেকেআরের মেন্টর ওয়াসিম আক্রমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সাকিব৷

যাঁকে নিয়ে ক্রিকে মহল আলোড়িত, তিনি নিজে বেশ নিরুত্তাপ৷ ভাষা সমস্যার জন্য খুব বেশি কথা বলতে চান না৷ হায়দরাবাদ শিবিরের খবর, মুস্তাফিজুরের জন্য অল্প-বিস্তর বাংলা শব্দ শিখতে হয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রেন্ট বোল্টদের৷

এমনিতে ভারতীয়রা কম-বেশি বাংলা বলে দিতে পারেন৷ এ বার কী ব্র্যাডম্যানের দেশের ক্রিকেটারদের বাংলা শিখতে হবে মুস্তাফিজুরের জন্য?

এক ঝলকে ৯ ম্যাচ, ৩৩ ওভার, ২ মেডেন, ১৩ উইকেট, সেরা বোলিং ৩-১৬, বোলিং গড় ১৫.৬১, ইকোনমি ৬.১৫৷ সূত্র : ইন্ডিয়ান টাইমস
১২ মে ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে