শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬, ১০:০৬:২৩

ম্যাচ জেতানো মুক্তার আলী

ম্যাচ জেতানো মুক্তার আলী

স্পোর্টস ডেস্ক: ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে কাল গাজী গ্রুপের সঙ্গে শেখ জামাল ধানমন্ডির শ্বাসরূদ্ধকর জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মুক্তার আলীর। ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিতে আসা শেখ জামাল ধানমন্ডির অলরাউন্ডারকে প্রশংসায় ভাসালেন ম্যাচ রেফারি সামিউর রহমান। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি নিজেও ছিলেন পেসার। নিজের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তারকে কিছু পরামর্শ দিলেন সামি।

এবারের লিগে এ নিয়ে দুবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন মুক্তার। শেখ জামালের চারটি জয়ের তিনটিতেই রেখেছেন বড় অবদান। স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে দলকে জয়ের তীরে পৌঁছে দেওয়া মুক্তারের কাছে যেন ‘সহজ’ এক কাজ! গত ২৪ এপ্রিল ফতুল্লায় কলাবাগান একাডেমির বিপক্ষে দলের জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই। ৭ ওভারে ১৯ রানে ৪ উইকেট—মুক্তারের বোলিংয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছিল কলাবাগান একাডেমি।


২৬ এপ্রিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেখ জামালের মাহবুবুল করিমের সেঞ্চুরি কিংবা আবাহনীর তামিম ইকবালের ৯০ রানের ইনিংসের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুক্তারের ২ বলে ৭ রান। আবাহনীর বিপক্ষে শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা পেরিয়ে শেষ বলের ছক্কায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছিলেন মুক্তার।


ঘরোয়া ক্রিকেটে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা মুক্তারের আরও আছে। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে দুরন্ত রাজশাহীর তিনটি জয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটেও মুক্তারের হাত ধরে দল জিতেছে, এমন উদাহরণও আছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে জাতীয় লিগে রাজশাহী-চট্টগ্রামের ম্যাচটি নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। বিকেএসপিতে ছক্কাবৃষ্টি নামিয়েছিলেন রাজশাহীর পেসার। ১৬টি ছক্কা মেরে ছুঁয়েছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড। করেছিলেন ১৪৮ বলে ১৬৮ রান। ম্যাচটি মুক্তারের রাজশাহী জিতেছিল ৪০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। যদিও গত বছর মার্চে ১৬ ছক্কার রেকর্ডটি ভেঙে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কলিন মানরো।


স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কীভাবে পারেন এমন খেলতে ? কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেখ জামালের ড্রেসিংরুমে মুক্তো ছড়ানো হাসিতে মুক্তার জানালেন, একটা সময় তাঁর মনোযোগ ছিলেন শুধু পেস বোলিংয়েই। ব্যাটিংয়ে নিচের দিকে নামতে হয় বলে পরে মুক্তার পাল্টে ফেললেন তাঁর সিদ্ধান্ত, ‘একটা সময় ভাবলাম, নিজেকে অন্যভাবে তৈরি করতে হবে। এর পর দেখতাম ওপর (ব্যাটিং পজিশন) থেকে কেউ সেঞ্চুরি কিংবা ফিফটি করলেও সেটা যতটা না আলোচিত হতো তার চেয়ে বেশি হতো যদি আমি শেষে এক-দুইটা ছক্কা কিংবা দুই-একটা উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিতাম। সব সময়ই চিন্তা থাকে, যেমন পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন ম্যাচ জেতাব।’


অনেকে চাপে ভেঙে পড়েন। শেষ দিকে লেজে-গোবরে করে ফেলেন। সহজ কাজটিকেই কঠিন করে তোলেন। কিন্তু মুক্তারের কাছে বিষয়টি ভিন্ন। প্রায় অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তুলতেই যেন তাঁর আনন্দ, ‘নিজেকে এভাবেই তৈরি করেছি। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছি। এটা একদিনে হয়নি। অনুশীলন করতে করতে এই আত্মবিশ্বাসটা এসে গেছে। তা ছাড়া এমন পরিস্থিতি ভীষণ উপভোগও করি।’


মুক্তারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৬ সালের নভেম্বরে। প্রায় এক দশকের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বহুবার শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে জিতিয়েছেন দলকে। ম্যাচ জেতানোর এই দক্ষতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখাতে চান বাংলাদেশের হয়ে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি খেলা মুক্তার, ‘খুব কম খেলোয়াড় আছে যারা দীর্ঘ সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে জাতীয় দলে আসে। আমিও দীর্ঘ দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাদ পড়েছি। যদি আবার সুযোগ পাই, চেষ্টা করব চাপের মুখে নিজের সেরা খেলাটা খেলে সবাইকে দেখাতে।’-প্রথম আলো
২০ মে২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে