বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬, ০৬:০৫:০৫

স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকতে চান মুস্তাফিজ

স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকতে চান মুস্তাফিজ

সুরাইয়া নাজনীন : অনেক এলোপাতাড়ি প্রশ্ন সামনে নিয়েই ফোন করা! প্রথমবারেই ফোন ধরলেন মোখলেছুর রহমান পল্টু, মুস্তাফিজের ভাই। হ্যাঁ মুস্তাফিজুর রহমান, যে বাংলাদেশের অপূরণীয় সম্পদ। কম সময়েই খেলার জগৎটাকে জয় করে নিয়েছেন তিনি। কথা বলতে চাইলাম মুস্তাফিজের মায়ের সঙ্গে। লাজুক মা মৃদু হেসে ‘হ্যালো’ বললেন। আমিও সুযোগ পেয়ে বলে ফেললাম, মুস্তাফিজ কিন্তু শুধু আপনার সন্তান নয়, গোটা দেশের সন্তান। তিনিও তা মেনে নিলেন খুব সহজে।

অল্প দিনেই সবার মনে স্থায়ী আবাস গড়ে নিয়েছেন মুস্তাফিজ। তার খেলার দিন এলে ছোট-বড় সবাই পাখির নীড়ের মতো চোখ করে বসে যান টিভির সামনে। বোলিং দেখার অনাবিল আনন্দ মুস্তাফিজই শিখিয়েছেন। শান্ত, লাজুক স্বভাবের এই ছেলেটা একদিন যে বিদেশ পাড়ি দেবে কে জানত! মার মন কি কখনো বুঝতে পেরেছিল?
ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল। পড়াশোনায় ততটা মনোযোগী ছিল না। পরিবার থেকেও কোনো প্রকার জোর করা হয়নি লেখাপড়া নিয়ে।

এ বিষয়ে বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‍‍‘ছোটবেলা থেকেই মুস্তাফিজ খাতা-কলমের মতো বল নিয়ে পড়ে থাকত তাই আমরাও আর মানা করিনি’ তার বাবার কথাই চটজলদি বুঝে নিলাম খেলা নিয়ে পারিবারিকভাবে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি মুস্তাফিজকে। কিন্তু বড় দলে খেলার সুযোগটা কোথা থেকে আসবে? এ বিষয়ে মোখলেছুর রহমান এক বাক্যে বলে ফেলেন, ‘এখানে মাশরাফি ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি, তিনি না থাকলে হয়তো এতকিছু সম্ভব হতো না।’ মুস্তাফিজও তা অবলীলায় স্বীকার করেন সবসময়।

ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুস্তাফিজ সবার ছোট। বড় ভাই গ্রামীণফোনে চাকরি করেন, মেজ ভাইয়ের ঘেরের ব্যবসা আর সেজ ভাইও মুস্তাফিজের মতো খেলাপাগল। দুই বোন সাবেরা পারভীন ও সালেহা মাহমুদ। বড় বোন বাড়িতেই থাকেন আর ছোট বোন খুলনা কলেজে অনার্সে পড়ছেন। অনেক দিন পর বাড়িতে এলে মুস্তাফিজ সময়  কাটান বন্ধুদের সঙ্গে। খেলা নিয়ে তাদের সঙ্গে মজার মজার খুনসুটি হয়। প্রিয় বন্ধু হাফিজ, যতীন্দ্র, মনি। কথা হয় ভারত থেকেও। বাড়িতে এলে একা থাকার সুযোগ হয় না আর, নতুন বউ দেখার মতো সব হুমড়ি খেয়ে পড়ে মুস্তাফিজের বাড়িতে। মা মাহমুদা খাতুন দিন গোনেন ছেলে কবে আসবে। অত দূরে একা ছেলেটা কী খায় না খায় এমন ভাবনাই মায়ের দিন কাটে। মায়ের হাতের সব রান্নাই পছন্দ মুস্তাফিজের তবে বিশেষ করে মুরগির মাংসের ঝোল আর খিচুড়ি ভালোবাসেন। দেশি সবরি কলা হলে তো কথাই নেই।

কেমন বউ পছন্দ মুস্তাফিজের মায়ের? এ প্রশ্নে তিনি হেসে কুটি কুটি, এতটুকু ছেলের আবার বউ! ছেলে ছোট হলে কী হবে এরই মধ্যে বাড়িতে চিঠি আসা শুরু হয়েছে ডাকযোগে কিন্তু এতে খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বাড়ির লোকরা। এসবে তারা অভ্যস্ত নন। মুস্তাফিজের জন্য মায়ের ধার্মিক বউ পছন্দ।  

বাবা আবুল কাশেম শান্ত অমায়িক স্বভাবের, আস্তে আস্তে কথা বলেন। ভার্চুয়াল জগৎ তার একদমই পরিচিত নয়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না তবে মজার ব্যাপার হলো ছোটবেলায় তার ফুটবলের প্রতি অনেক নেশা ছিল। কিন্তু এখন আর ওসবে তিনি নেই। নামাজ, রোজা ধর্ম নিয়েই থাকেন। মুস্তাফিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক কেমন পরিবার নিয়ে? এ বিষয়ে আবুল কাশেম জানান, ওর তো সবসময় বাড়িতে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয় না তাই মুস্তাফিজের ইচ্ছা আমাদের সবাইকে নিয়ে ঢাকা থাকার।

এবারের আইপিএল মাতিয়ে রেখেছেন মুস্তাফিজ। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তার প্রচুর ভক্ত আছে। আইপিএল ছাড়াও ইউটিউবে বেশিবার ব্যবহার হয়েছে মুস্তাফিজের নাম। আজ এলিমিনেটরে সাকিব আল হাসানের কলকাতা নাইট রাইডার্সে প্রতিপক্ষ মুস্তাফিজুর রহমানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। যে দলই হারবে তাদের বিদায় নিতে হবে টুর্নামেন্ট থেকে। এলিমিনেটরের এই ম্যাচকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। মুস্তাফিজের বোলিং ম্যাজিক দেখার জন্য সবাই খুব উদগ্রীব। এখনো পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে সেরা বোলারদের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজ সম্পর্কে ইংল্যান্ডের পত্রিকা আর্গাসকে সাসেক্সের অধিনায়ক লুক রাইট বলেন, ‘ফিজ অবশ্যই আসছে, আমরা নিশ্চিত করছি কতগুলো ম্যাচ খেলবে। আমাদের বুঝতে হবে ওর বয়স খুবই কম। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির বাইরে আছে এমন একটা পরিবেশে যেখানে সে ভাষাটা বলতে পারে না। অনেক ম্যাচও খেলেছে সে। আমরা ওকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে চাই, যেন ওর কাছ থেকে সেরাটা পেতে পারি। ভারতেও প্রমাণ করছে সে কতটা ভালো। ওকে দলে নিতে পারাটা ছিল আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার, কারণ আমার মনে হয় না, ভবিষ্যতে এত সস্তায় আমরা ওকে পাব। এই মাপের একজন ক্রিকেটারের জন্য একটু বেশি সময় অপেক্ষা করাই যায়।’-মানবকন্ঠ
২৫ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে