আরিফুর রাজু: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টাইগারদের তারণ্যের গতি যেন কেউই রুখতে পারছেনা। তাদের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তি সম্পন্ন দেশগুলো। কি ভারত, কি দক্ষিণ আফ্রিকা। সবাই যেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের বেল্কিতে আচমকা। ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোইট ওয়াস করার পর টাইগার ফাঁদে পা দিলো ক্রিকেট বিশ্বের আরেক পরাশক্তি পাকিস্তান। এর পর একে একে আফ্রিকা-ভারত বধের দৃশ্য দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব।
আন্তজার্তিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর পক্ষ্ থেকে পূর্ব ঘোষিত তারিখে অর্থাৎ চলতি মাসের ২৭ তারিখে দুইটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড দল গঠন থেকে শুরু করে অর্ভন্তরীণ সব ঝামেলা মিটিয়েছেন। সদ্য শেষ হওয়া অ্যাশেজে ব্যর্থতার দায়ে অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের বিদায় ছাড়াও বেশ কয়েকজন পুরানো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বিদায় নেন জাতীয় ক্রিকেট থেকে। এছাড়াও অ্যাশেজের ধকল কাটাতে এ্যান্ডারসনের মত অভিজ্ঞ পেসারকে অবসরে রেখে দল ঘোষনা করেছিল দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
আর অন্যদিকে টাইগার স্কোয়াডটি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশে জাতীয় ক্রিকেটের যুগের সবচেয়ে ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে। বাংলাদেশ ১৫ সদস্যের দলে রাখা হয়েছিল বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশের বিস্ময়কর বালক মুস্তাফিজ, অলরাউন্ডার নাসির হোসেন-সৌম সরকারসহ ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে।
বলা বাহুল্য যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘোষিত বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডটি সর্বকালের সেরা স্কোয়াড। তাই ক্রিকেট বিশ্ব ধরেই নিয়েছিল যে বাংলাদেশের মাটিতে স্মিথের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া টিম দেখবে অন্য এক বাংলাদেশকে। এই সিরিজে পালের নৌকা হয়তো বইবে উল্টো দিকে। বাংলাদেশকে অসিদের বিপক্ষে জয়ের ক্ষমতা রাখে সেটি নিজ মুখেই স্বীকার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া শিবিরের সদ্য দায়িত্ব গ্রহন করা স্মিথ। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ পরিবেশটা তাদের দেশের পরিবেশের চাইতে অনেকটা ভিন্ন। এখানে উইকেট এবং রান পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয় খেলোয়াড়দের। যা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনেকটা সহজ।’ এছাড়া তাদেরকে কৃত্রিম উপায়ে অনুশীলন করতে দেখা গেছে। উদ্দেশ্য একটাই টাইগারদের বিপক্ষে তাদের জয় চাই ই চাই।
কিন্তু সফরের আগের দিন অস্ট্রেলিয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের নিরাপত্তা সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স এন্ড ট্রেড (ডিএফএটি) এর রির্পোটের ওপর ভিত্তি করে ঘোষণা দিলো তারা বাংলাদেশে তাদের টিমকে পাঠাবে না। না পাঠানোর কারণ হিসেবে জানালেন নিরাপত্তার অভাব। আর তাই বাংলাদেশের নিরাপত্তা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আজ (রোববার) ঢাকায় এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই সদস্যের পর্যবেক্ষক দল। এই দলে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দলের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান শন ক্যারল। তাদের রিপোর্টের উপরেই ভিত্তি করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরের পরবর্তী ঘোষণা দিবে।
পিছনের দিকে একটু ঘুরে গেলে দেখা যাবে গত ২০১৪ টি-টোয়ান্টি বিশ্বকাপে ডিএফটি একি ঘোষণা দিয়েছিল। তার পরও তারা বাংলাদেশে সফর করেছিল এবং ওই আসরে খেলেছিল। তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করলেও কেউ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের উপর আক্রমন করেনি। কারণ এই দেশের মানুষরা অতিথিদের সম্মান দেখাতে জানে। যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের মহিলা ক্রিকেট টিমকে উত্তপ্ত পাকিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে কিনা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড ভয় পাচ্ছে তাদের খেলোয়াড়দের এ দেশে পাঠাতে।
তাতের উদ্দেশ্য করে এখন প্রশ্ন রাখা যায় অসি ক্রিকেট বোর্ডের ভয়টা কোথায়? জঙ্গি হামলা নাকি বাংলার টাইগারদের থাবা?
উল্লেখ্য,৩রা অক্টোবর ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তিন দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার কথা ছিল। এরপর প্রথম টেস্ট ৯ই অক্টোবর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে ও দ্বিতীয় টেস্ট ১৭ অক্টোবর ঢাকায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট খেলা কথা রয়েছে। এর আগে টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া দল প্রথম বাংলাদেশে আসে ২০০৬ সালে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজও খেলে গিয়েছে অজিরা।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫,এমটি নিউজ২৪/আরিফুর/রাজু