স্পোর্টস: আর মাত্র তিন দিন৷ তারপরই মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে হিমালয়ের কোলে শুরু হচ্ছে গান্ধী-ম্যান্ডেলা সিরিজ৷ রোববারই দিল্লিতে পা রেখেছে টিম দক্ষিণ আফ্রিকা৷ সোমবার নেমে পড়ছে প্র্যাক্টিসে৷ কাল মঙ্গলবার পালামে ভারত বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের সঙ্গে প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ফাফ দু প্লেসির টিমের৷
সেই ম্যাচে যে তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটাররা ছেড়ে কথা বলবেন না, বুঝিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মনদীপ সিং৷ অনেকটা বিরাট কোহলির ঢঙেই বলেছেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলব৷'
অবশ্য সামনের ক'দিন ফাফ দু প্লেসি, এবি ডেভেলিয়ার্সদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে যে টিম ইন্ডিয়া সেটা বিরাট কোহলির নয়, বরং এ হল ধোনির ভারত৷ আর আজ থেকেই ধরমশালায় বেস ক্যাম্প গেড়ে বসছে ধোনির ভারত৷
ধরমশালাকে প্রাকৃতিক শোভার জন্য স্বর্গের সঙ্গে তুলনা টানা যেতে পারে৷ দালাই লামার জন্য বিশ্ব শান্তির শহর বললেও বাড়াবাড়ি হবে না৷ কিন্তু ক্রিকেটের আবহে আগামী ক'দিন সেই ধরমশালাকে যুদ্ধক্ষেত্রের বেশি কিছু বলা যাবে না৷ অন্তত ভারতীয় টিম যে ভাবে দালাই লামার শহরকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যাট-বলের যুদ্ধে যেন গোলা-বারুদের গন্ধ৷
সাধে ভারতীয় টিম পরিকল্পনা বদলে দু'দিন আগেই হাজির হয়ে যাচ্ছে হিমালয়ের বুকে৷ এখানেই শেষ নয়, বেশি উচ্চতায় খেলার জন্য বিশেষ 'হাই অল্টিটিউড ট্রেনিং' ঢুকে পড়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনি অ্যান্ড কোম্পানিতে৷ আসলে ভারতীয় টিম উপলব্ধি করছে, বেশি উচ্চতায় মানিয়ে নেওয়া কতটা জরুরি৷ তার উপর পাহাড়ে অক্টোবরের ঠাণ্ডা আবহাওয়া৷ এ দেশে ধরমশালার মতো পরিবেশে খেলতে বড় একটা অভ্যস্ত নন ধোনি, বিরাট, অজিঙ্ক রাহানেরা৷
এমনিতে ধোনি নিজে আর্মি ট্রেনিংয়ের বড় ভক্ত৷ বাংলাদেশ সিরিজ পর কোনও ম্যাচ খেলেননি৷ তাতে কী? নিজেকে ফিট রাখতে আর্মি ট্রেনিং করেছেন৷ আগ্রায় প্যারাট্রুপার ট্রেনিং করেছেন৷ এ বার সেই পথেই নিয়ে যেতে চান নিজের টিম ইন্ডিয়াকে৷
বিরাট কোহলির স্লোগান 'আগ্রাসন' হতে পারে৷ কিন্তু সেটা টেস্ট টিমে৷ আপাতত নীল জার্সিতে ভারতীয় টিমের সেনাপতি ধোনিই৷ আর তাঁর ইচ্ছেতেই ধরমশালা থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে 'মিশন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ'৷ যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ধরমশালায় আর্মি ট্রেনিংয়ে নিজেদের তৈরি রাখার কথা ধোনি ব্রিগেডের৷
বেশি উচ্চতায় খেলার ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীকেও৷ এমনিতে ভারতীয় টিমের বুধবার আসার কথা ছিল ধরমশালায়৷ বদলে শাস্ত্রী-ধোনির ইচ্ছেতেই আজ সোমবার থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ঠিকানা হতে চলেছে হিমালয়ের শহর৷ হিমাচল ক্রিকেট সংস্থার এক সদস্য বলেছেন, 'শ্রীলঙ্কা থেকে আসার পর রবি শাস্ত্রী নিজেই এইচপিসিএ-র প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন৷ সেখানে শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, হাই অল্টিটিউডে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন, বিশেষ করে প্র্যাক্টিসের সময়, সে সবই যেন ভারতীয় টিমের জন্য বন্দোবস্ত করা হয়৷' তার পরই অনুরাগ সংস্থার কর্তাদের সব ব্যবস্থা করতে বলেন৷ সেই ছক মেনেই সব চলছে৷
ধরমশালা বলে হাই অল্টিটিউড ট্রেনিং, কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা ভেবে পুরো টিম ইন্ডিয়াই একটা বিশেষ ট্রেনিং কোর্সের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে৷ যে রহস্য ভেঙেছেন এক জাতীয় নির্বাচক স্বয়ং, 'আসলে পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে যাতে আমাদের টিমের ক্রিকেটাররা চাপের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে, সেটার জন্য৷' সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, 'আমরা চাইছি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসা৷ এ ধরনের ট্রেনিং স্পোর্টসম্যানদের মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে৷ মূল লক্ষ্যটা হল, টিমে যেন কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে৷'
আর্মি ট্রেনিংয়ের অভ্যেস অবশ্য নতুন নয়৷ বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ায় কম্যান্ডো ট্রেনিং করেছিল ধোনির ভারত৷ শুধু ট্রেনিং নয়, নকল বুলেট দিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের আবহ তৈরি করা হয়েছিল৷ সেই টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্যের কথায়, 'ধোনি নিজে আর্মি ট্রেনিংয়ের ভক্ত৷ নিজে টিম ওয়ার্কে বিশ্বাসী৷ ও চায় আর্মিদের মতো ওর টিমটাও সব সময় এক টিম হয়ে খেলে৷'
প্রচণ্ড সিরিয়াস দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরও৷ যে হেতু এ বার ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তাই এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ তিন ফর্ম্যাটে তিন অধিনায়ক প্রোটিয়া বাহিনীর৷ কিন্তু আপাতত সব ফোকাস অবশ্য টি-টোয়েন্টিতেই৷
অবশ্য শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ চোটের জন্য টি-টোয়েন্টি টিম থেকে ছিটকে গিয়েছে ডেভিড ওয়াইজ৷ বদলে টিমে এসেছেন বছর ৩৪-এর অলরাউন্ডার অ্যালবি মর্কেল৷ মূলত আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতার জন্যই শিকে ছিঁড়েছে অ্যালবির৷
সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল, সিরিজের কাউন্টডাউন শুরু৷ মাঠে শুধু বল পড়ার অপেক্ষা৷
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি