বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬, ০২:৩২:৫২

শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দেন টাইগার হান্নান

শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দেন টাইগার হান্নান

স্পোর্টস ডেস্ক : শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দেন টাইগার হান্নান। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে নির্মম রসিকতা করেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে নাকি এক দিনেই টেস্ট ম্যাচ জেতা খুবই সম্ভব। বলেই থেমে যাননি, কীভাবে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে টেস্টে এক দিনের মধ্যেই হারাতে পারবে, তার একটা পথও বাতলে দিয়েছিলেন।

হুকস আজ নেই, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ওপারে নিয়ে গেছে তাঁকে। কিন্তু বেঁচে থাকতেই হুকস দেখেছেন, তার মতো সংশয়বাদীদের ভুল প্রমাণ করে কীভাবে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তার এক দিনেই টেস্ট শেষ করার তত্ত্বটা তো টাটকা থাকতে থাকতেই বাতিল প্রমাণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়ার তখনকার সর্বজয়ী দলের বিপক্ষে টেস্টে লড়াইটা তাদেরই মাঠে মাত্রই যাত্রা নবীন একটা দল খুব মন্দ করেনি।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো চমকেই দিয়েছিল বাংলাদেশ, ২০০৩ সালের ওই সফরে।বাংলাদেশের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা এলে, চমকে দেওয়ার কথা এলে আসবে হান্নান সরকার নামও। বেশ বুক চিতিয়েই ম্যাকগ্রা-গিলেস্পি-ব্রেট লি-ম্যাকগিলদের খেলেছেন। বিশেষ করে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। সেবার কেয়ার্নসে দুই ইনিংসেই করেছিলেন দুটো দুর্দান্ত ফিফটি। বাংলাদেশ দলে খুব বেশি দিন খেলেননি হান্নান। মাত্র আড়াই বছরের জাতীয় দলে খেলা হান্নানকে আজও তৃপ্তি দেয় সেই দুই ফিফটি।

২০০৩ সালের ২৫ থেকে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সেই টেস্টে শুরুটা দুর্দান্তই হয়েছিল বাংলাদেশের। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। কেয়ার্নসের বাউন্সি উইকেটে ম্যাকগ্রা-লি-গিলেস্পিরা বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দেবেন—ওয়াহর উদ্দেশ্যটা ছিল এমনই। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ যা করেছিল, তা হয়তো দূরতম কল্পনাতেও ছিল না অস্ট্রেলিয়ার।

কাল হান্নান ফিরে গেলেন ১৩ বছর আগের সেই সময়টায়। বললেন, ‘জানেন, সিরিজটা নিয়ে আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম। ভয়, কিংবা স্নায়ুর চাপও ছিল। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা অনুভূতি। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটের কথা শুনে বড় হয়েছি, ক্রিকেটার হয়েছি। সেখানেই ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি-লিদের খেলব, ভাবতেই পারছিলাম না।

ওই সময়টা দল হিসেবেও আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলছিলাম। ২০০৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি ছিল বেশ টাটকা। বিশ্বকাপের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজটাও ছিল বাজে। অস্ট্রেলিয়া সফরটা আমাদের জন্য ছিল সম্মান রক্ষারই। ডারউইনের প্রথম টেস্টে পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। কেয়ার্নসে তাই ভালো খেলার আলাদা একটা চাপ ছিল আমাদের ওপর।

হান্নান বলে যান, ‘জেদ নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। অল্প রানে জাভেদ ওমরের উইকেট হারানোর পর আমি ইতিবাচক ব্যাটিং করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আউট তো হবই, আউট হওয়ার আগে নিজের খেলাটা খেলি। ম্যাকগ্রা-গিলেস্পি-লিদের মোটামুটি খেলার পর আমি ম্যাকগিলের ওপর চড়াও হই। সুইপটা ভালো খেলতাম। ওর এক ওভারে তিনটি চার মেরেই (তিনটি চারসহ ১৪ রান নিয়েছিলেন) ফিফটি করেছিলাম। মনে হয়েছিল দিনটা আমারই।

প্রথম ইনিংসে ৭৬ রান করেছিলেন হান্নান। ১৯৭ মিনিট উইকেটে থেকে খেলেছিলেন ১৩৬টি বল। সত্যিকারের টেস্ট ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫৫। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপটা আছেই। কিন্তু সে টেস্টে যা করেছিলেন, তাতে প্রশংসা পেয়েছিলেন সবার, ‘অস্ট্রেলীয়রা মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব পছন্দ করে। ইনিংসটা খেলার পর অনেকেই প্রশংসা করেছিলেন। স্টিভ ওয়াহও প্রশংসা করেছিলেন।

সবচেয়ে বড় প্রশংসাটা হান্নান পেয়েছিলেন ক্রিকেটের ‘বাইবেল’খ্যাত উইজডেন অ্যালমানাকের কাছ থেকেই। সেখানে বলা হয়েছিল, হান্নান বাংলাদেশের ক্রিকেটের দারুণ এক আবিষ্কার। ড্যারেন লেম্যান বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের এই দলের দুজন ক্রিকেটারের অস্ট্রেলীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা আছে। এঁদের একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা, অপরজন হান্নান সরকার।’

আজ এত বছর পর এই স্মৃতিগুলো আনন্দ দেয় হান্নানকে। তবে আক্ষেপ তার আছে অসময়েই জাতীয় দলের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার, ‘২০০৪ সালের নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা খেলেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ি।

আর ফিরতে পারিনি। খুব আপসেট হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এসব সবই অতীত। এখন আর এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আড়াই বছরের ক্যারিয়ারে ১৭ টেস্ট খেলেছি, এটাই বা কম কী!’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেয়ার্নসের সেই ইনিংস দুটিই হয়তো ভুলিয়ে দেয় হান্নানের সব আক্ষেপ, আফসোস।-প্রথম আলো্
২৮ জুলাই ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে