স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যতই আশাবাদী হোক, যতই বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলুন যে, আমরা তাদেরকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেবো, তবুও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খুব সম্ভবত, সিরিজই বাতিল করতে যাচ্ছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ফক্স স্পোর্টস জানিয়েছে, ‘আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড তাদের নাগরিকদের ওপর ঢাকায় সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করার পর, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশে তাদের সফর বাতিল করতে যাচ্ছে।’
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ইতালি নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনায় এখন তোলপাড় চলছে সর্বত্র। সবচেয়ে বড় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠি আইএস এই হত্যার দায় স্বীকার করে বার্তা ছড়িয়ে দেয়ায়। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত ফক্স স্পোর্টসের খবরে ইতালি নাগরিক হত্যার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এরপরই বলা হয়েছে, সোমবারের ওই ঘটনার পরপরই ঢাকা নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের চলাচলের ওপর সতর্কবার্তা জারি করে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়া সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা জঙ্গিদের টার্গেট শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এরপর শনিবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের সম্ভব্য ঢাকা সফর পিছিয়ে দেয়। ২৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) ঢাকায় আসার কথা ছিল স্টিভেন স্মিথদের।
একই সঙ্গে ফক্স স্পোর্টস গত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগারদের হত্যার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে তাদের রিপোর্টে। এরপর জানিয়েছে, ঢাকায় কিভাবে সক্রিয় রয়েছে ইসলামিস্ট জঙ্গিগ্রুপগুলো- তা এ ঘটনাগুলো থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্য সরকারের সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিগ্রুপগুলো সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশে পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদের টার্গেট করতে পারে। এ কারণে ইউকে কর্মকর্তারা তাদের দেশের নাগরিকদের চলাচলে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। অহেতুক চলাফেরা এবং বিভিন্ন স্থানে জড়ো হওয়া থেকে তারা যেন বিরত থাকে।’
একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জানিয়েছে, ‘তাদেরকাছে নতুন করে নির্ভরযোগ্য তথ্য এসেছে যে, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ানদেরকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা আঁটছে জঙ্গিগোষ্ঠিগুলো। একই আক্রমণ হতে পারে অন্য কোন দেশের নাগরিকদের ওপরও। যেমন মার্কিন নাগরিক।’ একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের কর্মকর্তা এবং নাগরিকদেরকে বড় কোন অনুষ্ঠানে, এমনকি আন্তর্জাতিকমানের কোন হোটেলে অনুষ্ঠিত কোন অনুষ্ঠানেও যোগদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরী হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বাংলাদেশ সফর করেন। এখানে সরকারের সকল পর্যায় থেকে তাকে সব ধরনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দেয়ার পরও, তিনি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন তার সঙ্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়া দলের ম্যানেজার কেভিন ডোভি এবং ফ্রাঙ্ক ডিমাসিকে। অথচ, এ দু’জনের ঢাকাতেই অবস্থান করার কথা ছিল।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও একদিনের ব্যবধানে গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছে স্মিথদের ঢাকা সফর। কারণ, ইতালি নাগরিক হত্যা এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের প্রতি ঢাকা সতর্কবার্তা জারি।
মর্নিং হেরাল্ডের রিপোর্টে আরও একটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেটা হলো বাংলাদেশে ইসলামিস্ট গ্রুপগুলোর সক্রিয় থাকা। এ জন্য তারা দায়ী করেছে এ দেশে ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে। তারা লিখেছে, ‘শঙ্কার বিষয় হলো ক্রুসেডার কোয়ালিশনের নাগরিকরা মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে নিরাপদ নয় মোটেও। আর বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ ভাগই হচ্ছে মুসলিম।’ (It warned that "citizens of the crusader coalition" would not be safe in Muslim nations. Almost 90 per cent of Bangladesh's 160 million population practises Islam.)
বুধবার অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি দলের (শন ক্যরল প্রমুখ) ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়াস অ্যান্ড ট্রেড-এর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর ক্যারল তার রিপোর্ট তুলে ধরবেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবং অধিনায়ক ও ক্রিকেটারদের সামনে। এরপরই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা বাংলাদেশ সফর নিয়ে।
তবে মর্নিং হেরাল্ড যেটা জানাচ্ছে, সেটা হলো- আপাতত এ যাত্রায় বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার সফরের সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। কারণ, এত অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেটারদের ঠেলে দিতে চাইছে না। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেটা বরাবরই বলে আসছে সেটা হলো, ‘আমরা সরকারের পরামর্শের বাইরে কিভাবে যাবো?-বাংলামেইল
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে