শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৯, ১১:০৫:০৪

মসজিদের দানবাক্সে কোটি টাকা-স্বর্ণালঙ্কার ও রুপার অলঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রা

 মসজিদের দানবাক্সে কোটি টাকা-স্বর্ণালঙ্কার ও রুপার অলঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রা

কিশোরগঞ্জ : পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সটি খোলা হয়। কিন্তু এবার দানবাক্স খুলে সবার চক্ষু চড়কগাছ!

মসজিদের দানবাক্সে মিলেছে নগদ ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রাও।

তিন মাস পর শনিবার দানবাক্স খুলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টাকা গণনা। প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্স হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচটি লোহার সিন্দুক। আর বরাবরই এসব দানবাক্স খুললে বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার মেলে।

এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার।

মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন বলছে,এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ,মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

মসজিদের খতিব,এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বলছেন, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।

স্থানীয়রা জানায়, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।

মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়।ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দ‚রদ‚রান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা প‚রণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।

তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন।বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।

আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।

আর দানের বিপুল অর্থ মসজিদ ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

এ ব্যাপারে কথা হলে কিশোরগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা এবং স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রা তার শাখায় জমা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট মোহম্মদ হাবিবুর রহমান জানান,তিনি ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট মো. নাজির হোসেনের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলার পর সকাল থেকে প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্যাংক,মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা টাকা গোনার কাজে অংশ নেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে