এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : যেন টাকার খনি! সিন্দুক খুললেই কোটি কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে মানুষ দু’হাত ভরে দান করে। জেলায় এটি এক আলোচিত বিষয়। সিন্দুক খোলার পর হিসাব শেষে টাকার অঙ্ক শুনে বিস্ময়ে চোখ কাপালে ওঠে লোকজনের।
প্রয় তিন মাস পর পর খোলা হয় মসজিদের সিন্দুক। প্রতিবারেই পাওয়া যায় তিন থেকে চার কোটির কাছাকাছি টাকা। শুধু দেশি টাকা নয়, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, সোনা-রূপার অলঙ্কারও পাওয়া যায় অনেক। মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিপত্রও থাকে সিন্দুকে। রোগমুক্তি, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাসহ নানা বাসনার কথা লেখা থাকে ওইসব চিঠিতে।
সবশেষ জুলাই মাসের দুই তারিখে খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানের সিন্দুকগুলো। তখন সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার বাদে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। এর আগে মার্চে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তারও আগে গত বছর নভেম্বর ৬ তারিখ সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা।
এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাস ২৯ দিন পর আজ শনিবার কঠোর নিরাপত্তা আর বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় মসজিদের আটটি সিন্দুক। সকাল ৮টায় খোলা হয় এগুলো।
ওই সময় মসজিদের সিন্দুক খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোহরা সুলতানা যূথী, মোসাম্মাদ নাবিলা ফেরদৌস, এনডিসি সুশান্ত প্রমুখ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। বস্তাগুলি ধরাধরি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া যান তারা। সবমিলিয়ে এবার পাওয়া গেছে ১৫ বস্তা টাকা। এ টাকাই গণনা করা হবে সারাদিন। আগেরবার সাড়ে ১৬ বস্তা টাকা মেলে।
যে ব্যাংকে পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয়, সেই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারি, মসজিদ কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সবমিলিয়ে প্রায় দু’শতাধিক লোক টাকা গণনা করেন।
জানা গেছে, পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক। আর সাধারণ সম্পাদক হলেন কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া।
পাগলা মসজিদের সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, মসজিদের দানের টাকা দিয়ে, এখানে একটি আন্তর্জাতিকমানের বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ স্থাপন করা হবে। ওই কমপ্লেক্সে ৬০ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে।
নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরো নানা আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছি। এতে প্রকৃতপক্ষে কত খরচ হবে তারা তা চূড়ান্ত করে আমাদের জানাবে। এরপর কাজ শুরু হবে কমপ্লেক্সের। তিনি এ সময় জানান, ইসলামিক কমপ্লেক্সের পুরো ব্যয় দানের টাকা থেকে করা হবে।
টাকা গণনার কাজে একদল পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হয়। তাছাড়া গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রেখে চলেছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা মহামারির সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবার জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি এবং ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এইসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারাবছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ।
পাগলা মসজিদে মাদ্রাসার ১২০ জন ছাত্র, মসজিদের ৩৪ জন কর্মচারী ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনার কাজ করেছেন। জানা গেছে, মসজিদের বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তে মসজিদের সম্পদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদে টাকা-পয়সা দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের লোকজন এখানে টাকা-পয়সা দান করে থাকেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতিও। দিন দিন মসজিদে দানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।