রফিকুল ইসলাম রনি : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা। এই তিন নেতা হলেন—আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর বাইরে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে কঠোর পরিশ্রমে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমও এই চ্যালেঞ্জে রয়েছেন।
সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার সমর্থকদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ নিয়ে ওবায়দুল কাদের সফল হয়েছিলেন। শামীম ওসমান সমর্থকদের মাঠে নামাতে পেরেছিলেন আইভীর পক্ষে। কিন্তু এখনো বাহার সমর্থকদের মাঠে নামাতে পারেননি। রবিবার এ নিয়ে ঢাকায় বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে কারা মাঠে নামবেন, কারা নামবেন না।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা সাধারণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর থাকাকালে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন সীমা। দুর্নীতি অনিয়মকে ঠাঁই দেননি। এমনকি কাজ করার ক্ষেত্রেও নিজের পরিবার-পরিজনের কথা শোনেননি। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা তাকে ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত করছে। সরকারি দলের সঙ্গে তার গভীর গোপন সম্পর্ক নিয়ে বিরক্তি খোদ বিএনপিতেই। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের ঐক্যই পারে সীমার উত্তরণ ঘটাতে। কুমিল্লার মাঠ-ঘাট ঘুরে এনামুল হক শামীম আশাবাদ ব্যক্ত করছেন নারায়ণগঞ্জের পর কুমিল্লা সিটিতেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হবে। দলীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন যারাই দলের বিরুদ্ধে যাবে তাদের কুমিল্লা মহানগর কমিটিতে রাখা হবে না। এমনকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
এ কারণে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মিলে নারায়ণগঞ্জকে সঠিক পথে আনতে ভূমিকা রেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই এবার কাজে লাগাতে চান কুমিল্লায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি নারায়ণগঞ্জের মতোই অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কুমিল্লা সিটিতে। জনগণ তাদের মতামত দিতে পারবেন।
দলীয় কোন্দল ও বাহার গ্রুপের নেতাদের মাঠে নামাতে সক্ষম হবেন কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত বড় একটি দল। মনোনয়ন পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য লোক আছেন। সেখানে মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে নৌকার জন্য সবাইকে মাঠে নামতে হবে এবং তারা নামতে বাধ্য হবে। কারণ যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন তারা নৌকার সঙ্গে বেইমানি করতে পারেন না। সবাই মাঠে নামলে আমাদের প্রার্থীই বিজয়ী হবে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দায়িত্ব পাওয়ার পর তার কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী ও স্থানীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মধ্যে সুসম্পর্কের ব্যাপক দূরত্ব ছিল। তারা একে অপরের বড় প্রতিপক্ষ ছিলেন। শামীম ওসমানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে শামীম গ্রুপের সব নেতা-কর্মীকে আইভীর পক্ষে মাঠে নামাতে সক্ষম হন তিনি।
প্রথম দফায় সফল হন ওবায়দুল কাদের। এবার তার সামনে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কুমিল্লার রাজনীতিতে সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার-আফজল খানের বিভাজনের রাজনীতি। সীমার মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় বাহার গ্রুপের কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। এখন পর্যন্ত তেমন সক্রিয়ভাবে মাঠে নেই। ১২ মার্চ রবিবার সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে সিটি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কুমিল্লার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় দিকনির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের সাধারণ সম্পাদক সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি টিম গঠন করে দেওয়ার পাশাপাশি টেলিফোনেও যোগাযোগ রাখছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কুমিল্লার নেতাদের সঙ্গে। জানা গেছে, কুমিল্লার রাজনীতি আফজল-বাহার দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তবে বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চমকের মতো বাহার-আফজল একই মঞ্চে উঠেছিলেন। সে সময় আফজল খান ও তার কর্মী-সমর্থকরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছিলেন।
ওই দুই নেতার দ্বন্দ্ব নিরসনে সে সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)। এবার সিটি নির্বাচনেও তার জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে না পারলে দলের হাইকমান্ডের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে তাকে। অন্যদিকে সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই কুমিল্লা সিটিতে চষে বেড়ানো নেতা চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলেও এবার তার নিজ বিভাগের নির্বাচন। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত টিমে তিনি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। - বিডি প্রতিদিন
১০ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি