কুমিল্লা থেকে : ‘আমার তনুকে ছাড়া কিভাবে ঈদ করবো ? তার কথা মনে আসলে বুকটা যেন ভেঙে যায়, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ১৫ মাস পূর্তিতে বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ ও যন্ত্রণা নিয়ে সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে এমন কথাই জানাচ্ছিলেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
মঙ্গলবার দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৫ মাস পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু এখনো অধরা তনুর ঘাতকরা। একাধিকবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও দীর্ঘ এ সময়ে মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর মা আরও বলেন, কার কাছে বিচার চাইব? সমবেদনা জানাতে এসে যারা ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল, তারাও এখন চুপচাপ, সিআইডিও এখন খবর নেয় না, বাসায় আসে না, কল করে না। দীর্ঘ ১৫ মাসেও তনু হত্যার মোটিভ বের ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
মামলার তদন্তের নামে জিজ্ঞাসাবাদ আর ডিএনএ পরীক্ষার একই বৃত্তে ১৫ মাস যাবৎ ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। এ নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও মিডিয়ায় মুখ খুলতে নারাজ। তাই মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ তনুর পরিবার।
জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমেকের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করে প্রতিবেদন দেয়ায় ঘটনার রহস্য উৎঘাটন নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় দেখা দেয়। ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।
গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। হত্যার আগে তনুকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল এমন তথ্যও তারা নিশ্চিত হয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা কিংবা ফলাফল কি? এ নিয়েও সিআইডি মুখ খুলছে না।
তাই দীর্ঘ ১৫ মাসেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ নির্যাতনকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গতকাল সোমবার তনুর মা আনোয়ারা বেগম সেল ফোনে আরও বলেন, আমার মেয়ে হারালাম কিন্তু বিচার পেলাম না। কারা মেরেছে আমার তনুকে দেশবাসী যা জানার তা জেনেছে, তনুর বাবা-ভাইয়ের ক্ষমতার দাপট থাকলে হয়তো চেষ্টা-তদবীর করে মেয়ে হত্যার বিচার পেতাম। গরীবের জন্য আল্লাহ আছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম থেমে নেই, মামলার বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কিছু অগ্রগতিও আছে। তাই এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশী মন্তব্য করতে চাই না। সময় হলেই সব প্রকাশ করব।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে