কুমিল্লা : স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে অভাব-অনটন ও পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে রওশন আরা বেগম (৪৫) নামে তিন সন্তানের জননী আ'ত্মহ'ত্যা করেছেন।
শনিবার দুপুরে ছেলে-মেয়েকে একতলা ভবনের একটি কক্ষে আটকে রেখে অপর কক্ষে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আ'ত্মহ'ত্যা করেন রওশন আরা। গৃহবধূ রওশন আরা বেগম কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ট্রাকচালক কাজী মনজিল মিয়ার স্ত্রী।
দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে স্বামীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গৃহবধূর স্বামী আত্মগোপনে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের মতিনগর গ্রামের রহমত আলীর মেয়ে রওশন আরা বেগমের সঙ্গে কুমিল্লা শহরতলীর দূর্গাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার কাজী পায়েল হকের ছেলে কাজী মনজিল মিয়ার বিয়ে হয়। ওই দম্পতির লিপি আক্তার (২৫) ও শিল্পী আক্তার (২২) নামে দুই মেয়ে ও সাজ্জাদ হোসেন (১৫) নামে এক ছেলে রয়েছে।
গৃহবধূর পরিবারের লোকজন জানায়, রওশন আরার স্বামী মনজিল মিয়া পরপর চারটি বিয়ে করেন। এতে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। মনজিল মিয়া চতুর্থ স্ত্রীকে নিয়ে ৪-৫ বছর ধরে একই এলাকার গোমতী আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। চতুর্থ স্ত্রীর সংসারে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এতে তার প্রথম স্ত্রী রওশন আরা বেগম তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর পৈতৃক বাড়িতে থাকেন।
ছোট ছেলে স্থানীয় একটি হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হলেও তারা মায়ের সঙ্গে থাকেন। তাদেরও শিশু সন্তান রয়েছে। কয়েক মাস আগে ছোট মেয়ে শিল্পি আক্তারের স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কিছু দিন আগে স্বামী পরিত্যক্তা বড় মেয়ে লিপি আক্তার শিশু সন্তান রেখে অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। রওশন আরা বেগম শহরের দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে কমিশন ভিত্তিতে রোগী সরবরাহের কাজ করতেন। এ আয় দিয়ে ছেলের লেখাপড়া ও দুই মেয়ের পরিবারকে লালন-পালন করতে গিয়ে অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছিলেন রওশন আরা। স্বামী খোঁজখবর না নেয়ায় এসব বিষয় নিয়ে রওশন আরা বেগম পারিবারিক অশান্তিতে ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে রওশন আরা বাড়ির একতলা ভবনে প্রবেশের মূল গেটে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেন। এ সময় বাড়িতে অবস্থান করা ছোট মেয়ে শিল্পী ও ছেলে সাজ্জাদকে ভবনের ভেতরের একটি কক্ষে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।
এরপর রওশন আরা ঘরের বারান্দায় গিয়ে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় মেয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে বাড়ির গেট খুলতে না পেরে মই দিয়ে ছাদের ওপর উঠে সিঁড়ির দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে উদ্ধার করেন।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত ৮টার দিকে রওশন আরা মারা যান। শনিবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে স্বামীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রওশন আরা বেগমের বড় ভাই দিনমজুর মাহফুজ মিয়া ও ছোট বোনের স্বামী মো. রুহুল আমিন জানান, রওশন আরার আ'ত্মহ'ত্যার খবর পেয়ে আমরা রাতে ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে মরদেহ দেখতে পাই। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাদেক বলেন, অভাব-অনটন ও পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে রওশন আরা বেগম আ'ত্মহ'ত্যা করেছেন বলে বাড়ির লোকজন ও গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শুনেছি।