কুমিল্লা : কুমিল্লায় টাকার অভাবে নবজাতককে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেলেন বাবা-মা। আর অভিভাবকহীন হতভাগ্য ওই শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। অর্থের অভাবে নবজাতক ফেলে মামা-মা পালিয়ে গেছেন এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশ সুপারের দৃষ্টিগোচর হয়। রোববার বিকালে নগরীর ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে ওই নবজাতকের চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পুলিশ সুপার।
এতে পুলিশ সুপারের মানবিকতা নিয়ে এলাকাবাসী ফের প্রশংসা শুরু করেছে। এর আগেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে সন্তান হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় একইভাবে চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
জানা যায়, গত ৫ জুলাই জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের হতদ'রিদ্র মিজানের স্ত্রী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি যমজ সন্তান জন্ম দেন। এ সময় ছেলে শিশুটি মারা যায় এবং মেয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন প'রিস্থিতিতে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। কিন্তু হতদ'রিদ্র পরিবারের পক্ষে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীর ঝাউতলা এলাকার কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালে। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে ভর্তি করা হয়।
এরপর থেকে বাবা মিজানুর রহমান উ'ধাও হয়ে যায়। আর মা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির সময় যে নাম্বার দেয়া হয়েছিল, সে নাম্বার কখনও বন্ধ থাকে আবার কখনও খোলা থাকলেও ফোন রিসিভ হয়নি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাবাকে খুঁ'জে না পেলেও মায়ের সন্ধান পায় এবং শিশুর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবগত করে।
৮ জুলাই মা হাসপাতালে আসলেও আর্থিক জোগান না থাকায় বিভিন্ন স্থানে পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা চাইতে থাকেন। বিষয়টি ফেসবুকে ভা'ইরাল হয়। এতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন। রোববার এমন সংবাদ পেয়ে শিশুটির বাবা ও অন্য স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। তারা জানান, অর্থের অভাবেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, শিশুটি অপরিপক্ব হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে। বর্তমানে আগের চেয়ে সুস্থ রয়েছে। তার ওজন সাড়ে ৭শ' গ্রাম। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা অভিভাবকহীন এ শিশুটির চিকিৎসা চালিয়েছি। শিশুটিকে জীবিত রাখাই ছিল আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য।
হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী জানান,৭ দিনে এ শিশুর চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে আরও অর্থের প্রয়োজন।