কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় শাশুড়ি ও স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করে জামাই লোকমান। দুইজনকে হত্যার পরও হাতে ছুরি নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় লোকমান। তখন তাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসারের পাশের গ্রাম হালগাঁওয়ে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা ঘাতক লোকমানকে হত্যার কাজে ব্যবহার করা ছুরিসহ আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের শাহালম মিয়ার স্ত্রী জানু বিবি (৫৫) ও তার মেয়ে ফারজানা বেগম (২৫)। ঘাতক লোকমান হোসেন উপজেলার ৭নং মোকাম ইউনিয়নের নিমসারের হালগাঁও গ্রামের মৃত আলম মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, শাশুড়ি জামাতার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। বিকালে শাশুড়ি ও স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে লোকমান হোসেন। পরে তাকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। লোকমান মাদকাসক্ত ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। প্রতিবেশীরা জানান, দুইজনকে হত্যার পর হাতে ছুরি নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় লোকমান।
এ সময় তাকে অস্বাভাবিক দেখায়, তবে ভয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিল না। মসজিদ থেকে ছুরিসহ লোকমানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এদিকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার বুড়িচং হালগাঁও গ্রামে লোকমান হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নাকাটি করছে শিশু রিমি (৫)। পাশে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তিন মাসের শিশু আরাফাত। এই অবুঝ দুই সন্তানকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছেন না।
কান্নারত কণ্ঠে শিশু রিমি বলে, বাবাকে পুলিশে নিয়ে গেছে, মাকে কবর দেওয়া হয়েছে। সে বারবার বলছে- আমাকে মা-বাবার কাছে নিয়ে যাও। দুই দিন আগেও রিমির বাবা-মা দুইজনই ছিলেন। দুর্ভাগ্য রিমির, বাবার হাতে তার মা খুন হয়েছেন। পরে তার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন এই দুই শিশুকে পৃথিবীতে দেখার মতো আপন কেউ নাই। এদিকে আরাফাত ও রিমির আশ্রয় মিলছে মোকাম ইউনিয়নের হালগাঁও গ্রামের পাশের বাড়ির মানবিক নারী রোকেয়া বেগমের বাড়িতে।
রোকেয়া বেগমের স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। রোকেয়া বেগম বলেন, পৃথিবীতে তো তাদের কেউ নেই; তাই আমি তাদের আশ্রয় দিয়েছি। বুড়িচং থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন জানান, মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘাতক লোকমানকে ছুরিসহ আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ জানা যায়নি।