দেশে সবশেষে ফোনালাপ ফাঁসে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের নাম। যেখানে তার নিজের দল আওয়ামী লীগ সম্পর্কে তীব্র আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা গেছে।
ফোনালাপে তিনি বলেছেন, ‘কী হবে এ দেশে রাজনীতি করে? টাকা দিলেই নমিনেশন পাওয়া যায়, মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, যারা নৌকা করেন, তারা রাজাকারের বাচ্চা। বিরোধী দল মাঠে নেই বলেই দেশ একতরফা চলছে, দেশের এ অধঃপতন।’
ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে রীতিমতো নানা মহলে সমালোচনা শুরু চলছে। ফোনটির অপরপ্রান্তে ছিলেন দেবিদ্বারের বিএনপি সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। উভয়ের নির্বাচনী এলাকাই দেবিদ্বার।
প্রায় দুই মিনিটের ওই অডিও ক্লিপ রোশন আলী মাস্টার এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের বলে দুজনেই স্বীকার করেছেন। তবে রোশন মাস্টার বলছেন, ফোনালাপটি খণ্ডিত করে প্রচার করায় এমনটি হয়েছে, পুরো অডিও প্রকাশ পেলে বিষয়টি নিয়ে এতটা সমালোচনা হত না।
জানা গেছে, তাদের কথা হয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। এরমধ্যে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শোনা যায়, বিএনপির রহুল আমিনের উদ্দেশে রোশন আলী মাস্টার বলছেন, ‘এখনও বলি কী হবে (আপত্তিকর) এ রাজনীতি করে, যারা নৌকা করেন, সব রাজাকারের বাচ্চা। কী করবেন, যে দেশে টাকা দিলে নমিনেশন পাওয়া যায়, যে দেশে টাকা দিলে মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, যে দেশে টাকা দিলে সব চলে। আপনারা বিরোধী দল শক্ত না বলে মামলা-হামলার ভয়ে মাঠে নামেন না, আপনার নেতারা চিপায় বসে মাইক নিয়ে ফকরবাজি করেন। একচেটিয়া কি একটা দেশ চলে? বিরোধী দল সব সময় স্ট্রং থাকতে হয়, আপনারা যদি সুযোগ দেন তাহলে তো অপকর্ম হবেই, যা ইচ্ছা তা-ই হবে, দেশের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী আপনাদের বিরোধী দল।’ এ সময় রুহুল আমিন বলেন, ‘এখন বিএনপি হয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন।’
রোশন আরও বলেন, ‘আপনারা দেবিদ্বারে কই? কোনো বিএনপি নেতা মাঠে বের হতে পেরেছে? মাঠে নেমে মিছিল মিটিং করেন, আমি আপনাদের সুযোগ করে দিই, অসুবিধা কি? আমি মঞ্জু ভাইকে (বিএনপির সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি) বলেছি, দেশে যান, আন্দোলন করেন, তাহলে বুঝব আপনারা রাজনীতি করেন, আপনারা তো সময় হলে একটু ইয়ে করেন, এগুলো করলে হবে না, রাজনীতি করতে হলে নেতৃত্ব দিতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।’
রোশন মাস্টারের এই মন্তব্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, দলের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য সত্যিই দুঃখজনক। একজন বিএনপি সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমন কথাবার্তা বলা উচিত হয়নি।
ফোনালাপ প্রসঙ্গে রোশন আলী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, সম্প্রতি আমার সঙ্গে দেবিদ্বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রুহুল আমিন সাহেবের ফোনালাপ হয়। ফোনে তিনি অভিযোগ করেন, তাদের আওয়ামী লীগ কোনো স্পেসই দেয় না। আমি এর উত্তরে বলেছি, আপনারা আন্দোলন করেন না, এলাকায় না এসে শুধু অভিযোগ করেন। এটি শুধু আমার বক্তব্য না, আমার দলের জেনারেল সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের সাহেবও অসংখ্য বার বিরোধী দলের এরূপ ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাবে এ কথা বলেছেন, যা নির্ভেজাল সত্য। এ ছাড়া সম্প্রতি দেবিদ্বারে সুযোগ সন্ধানি কিছু লোক আওয়ামী লীগে যোগদান করে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছেন, তাদের আমি রাজাকার বলেছি, এখনও বলব।
এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, রোশন ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে খোলামেলা কথা হয়েছে, সব কিছুই যদি ফাঁস হয়ে পড়ে, তাহলে কীভাবে কথা বলব? তিনি বলেন, আমার মাধ্যমে এ অডিও ফাঁস হয়নি। কীভাবে হয়েছে তাও জানি না। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের কথা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বলেন, রোশন আলী মাস্টারের ভাইরাল হওয়া ফোনালাপ শুনে আমি নিজেই হতবাক। তার মতো একজন দায়িত্বশীল নেতার মুখে এমন আপত্তিকর কথা! শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। একজন সিনিয়র নেতার পক্ষে এ ধরনের কথাবার্তা বলা মোটেও সমীচীন হয়নি।