কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লায় এবার নৃশংসতার বলি হলো মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনি নামের ২ সহোদর শিশু। সৎভাই কর্তৃক তাদেরকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন দক্ষিণ রসুলপুর (ঢুলিপাড়া) এলাকায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই শিশু ঢুলিপাড়ার ব্যবসায়ী আবুল কালামের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আবুল কালাম তার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ঢাকার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া নিহত ২ শিশুর সৎ ভাই মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটনকে দায়ী করেন।
নিহতদের পিতা আবুল কালাম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া বেগমের ছেলে ঢাকার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তার সৎ ভাই স্থানীয় হলি চাইল্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১ম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান জয় (৭) ও একই স্কুলের নার্সারির ছাত্র মেজবাউল হক মনিকে (৫) গলায় রশি পেঁচিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ঘরের খাটের ওপর রেখে ঘরের দরজায় তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
এ সময় ব্যবসায়ী আবুল কালাম তার শাশুড়ির চেহলাম উপলক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী রেখা বেগমকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভাল্লক গ্রামে ছিলেন। আবুল কালাম জানান, তার প্রথম স্ত্রীর ছোট মেয়ে তানজিনা মোবাইল ফোনে জয় ও মনির মৃত্যুর খবর জানালে তিনি বিকালে বাড়ি ছুটে আসেন।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া বেগমের ৩ কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে আইরিন আক্তার ও তাহমিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে, ছেলে মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে এবং ছোট মেয়ে সুফিয়া আক্তার তানজিনা স্থানীয় নেউরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী।
দ্বিতীয় স্ত্রী রেখা বেগমের নিহত ২ সন্তান ছিল। স্থানীয়দের ধারণা, পারিবারিক কলহ কিংবা বাড়ির মূল্যবান সম্পত্তির লোভে এ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। স্থানীয়রা আরও জানায়, ব্যবসায়ী আবুল কালাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও নিহত ২ শিশু ছেলের নামে সম্প্রতি ১৭ লাখ টাকায় জমি ক্রয় করেন। এতে প্রথম স্ত্রীর ছেলে মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তাদের ধারণা।
খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঁইয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান, সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আইয়ুবসহ পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে এ নৃশংস ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় সর্বস্তরের জনগণের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মা ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঁইয়া জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা যে ঘটিয়েছে তাকে সহসা গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস