কুমিল্লা : ছোট দুই ভাই হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন বিবিএ পড়ুয়া বড় ভাই। কুমিল্লা মহানগরীর ঢুলিপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর জয় ও মনির হত্যার ঘাতক সৎভাই ছোটনকে ঢাকার মালিবাগ থেকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করে কুমিল্লা ডিবি ও জেলা পুলিশের একটি যৌথ টিম।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি খুন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে এবং পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার আশঙ্কায় তিনি একাই বালিশ চাপা দিয়ে ও শ্বাসরুদ্ধ করে দুই সৎভাইকে হত্যা করেন বলে আদালতে জবানবন্দী দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর (ঢুলিপাড়া) এলাকায় মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনি নামে দুই শিশুর খুনের মামলার একমাত্র আসামি নিহতদের সৎভাই ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আল সফিউল ইসলাম ছোটনকে জেলা ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী আশ্রাফ ভূঁইয়া ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই সহিদুল ইসলামসহ পুলিশের একটি টিম মোবাইল ট্র্যাকিং করে সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ টুইন টাওয়ারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে মঙ্গলবার ভোর রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসেন।
মঙ্গলবার কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক ছোটন তার ২ সৎ ভাইকে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি পুলিশকে জানান, তার পিতা আবুল কালাম প্রায় ১০ বছর আগে তার মা রোকেয়া বেগমকে রেখে রেখা বেগম নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। পরে পিতার পরের এ সংসারে নিহত জয় ও মনির জন্মের পর থেকে পিতা আবুল কালাম এবং সৎ মা রেখা বেগম তাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করেন। লেখাপড়ার খরচ কমিয়ে দেন।
ছোট বোনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। সর্বশেষ পৈত্রিক সম্পত্তি হতে তাদের বঞ্চিত করবে মর্মে জানতে পারেন। এসব ক্ষোভ থেকেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটন তার ২ সৎ ভাই জয় ও মনিকে হত্যা করে আত্মগোপন করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজিজুল হক জানান, বিকেলে গ্রেফতারকৃত ছোটন কুমিল্লার ৯ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। ছোটন একাই ২ সৎ ভাইকে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
ছোটন জানান, তার ‘সৎ মা রেখা আক্তার তাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। আমরা তাকে বোন বলে ডাকতাম, কিন্তু পরিবারের কাউকে না জানিয়ে তিনি আমার বাবাকে বিয়ে করেছেন।
ছোটন জানান, তার বাবা ও সৎ মা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় এক আত্বীয়ের বাসায় যাওয়ার সুযোগে ২ সৎ ভাইকে একা পেয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। দুপুরে চকলেট ও আইসক্রিম কেনার জন্য জয়কে দোকানে পঠিয়ে প্রথমে মনিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার করা হয়। পরে জয় বাসায় ফিরলে তাকেও বিছানায় ঘুমানোর কথা বলে একই কায়দার হত্যা করা হয়। পরে বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ঢাকায় চলে চাই।
উল্লেখ্য, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে গত শনিবার বিকেলে কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর ঢুলিপাড়ার মুদি মালের ব্যবসায়ী আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া বেগমের ছেলে ঢাকার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন তার সৎ ভাই স্থানীয় হলিচাইল্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১ম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান জয় ও একই স্কুলের নার্সারী শ্রেণির ছাত্র মেজবাউল হক মনিকে গলায় রশি পেঁচিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
১ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম