নিউজ ডেস্ক : তনুশূন্য বাড়িটা যেন একেবারে খালি। বাবা-মার বুকফাটা আর্তনাদে যেন বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। শুধু বাড়ি নয় সেই গ্রামজুড়ে এখন চলছে শোকের মাতম। সেই কবরস্থানের পাশ দিয়ে গেলে যেন বুকটা ফেটে যায় গ্রামবাসীর, যেখানে ঘুমিয়ে আছে তনু।
সোহাগী জাহান তনুদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুরে। তনুশূন্য সেই গ্রামটি এখন নীরব-নিস্তব্ধ।
বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী। তনুর কবর জিয়ারত করে পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা।
ইউএনওকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা আর্তনাদ শুরু করেন তনুর বাবা-মা ও স্বজনরা। এসময় তারাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
হাঁটতে হাঁটতে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, বাবা আমার জেঠি আদর করে তার নাম রেখেছিল সোহাগী। তাকে সবাই আদর করতো। আমি আমার মাকে বলতাম, মা তোরে আমি বুকের মধ্যে আটকে রাখতে চাই। মেয়েটাকে কাছে পেলে বুকে টেনে নিতাম। সে বলতো বাবা, আমি তো বড় হয়েছি। তুমি কি পারবে আমাকে সবসময় বুকে রাখতে।
তনু হত্যার বিচার দাবিতে আজ রাজপথের পাশাপাশি ফেসবুকেও ঝড় বইছে। সাইফুল্লাহ খালেদ আবেগঘণ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘সেই তনু এখানে ঘুমিয়ে আছে। বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মিনিট পায়ে হেঁটে যেতে হয় তার কবরপ্রাঙ্গণে। রাস্তারে পাশে একটি বিল তার মাঝে একটি উচুঁ ডিবিতে শুয়ে আছে ইয়ার হোসেনের বুকের ধন সোহাগী। আকাশে চাঁদের আলোয় সবুজ মাঠগুলো নরম বিছানার মতো দেখতে। কি ফুরফুরে বাতাস বইছে। হয়তো সোহাগী এখানে শুয়ে আছে তাই।
প্রতিদিন মির্জানগরের এ পথ ধরে যারা হেঁটে যাবেন তারা হয়তো ক’দিন পরই ভুলে যাবেন বিলের পরে ওই কবরখানায় শুয়ে আছে নেকড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এক কিশোরী। বোন তনু তোর চোখের দিকে তাকালে আমার চোখ ছল ছল করে ওঠে।
আমার বোনটির বাসায় ফিরতে দেরি হলে আব্বা আমাকে বলতেন যাওতো ও এখনওতো এলো না। ঠিক তেমনি সেদিন প্রাইভেট পরিয়ে তুই আর বাসায় ফিরলি না। এরপর থেকে তোর বাবা-মা পাগলের মতো ছুটছে। তোর মা এখন প্রতিরাতে তোকে স্বপ্নে দেখে। তুই পুরস্কার আনার জন্য যে দুটো নতুন জামা আনতে বলেছিলি মা সেগুলো নিয়ে এসেছে।
তনু, ফেলানীরা শকুনের ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হয়। জাগিয়ে দিয়ে যায় আমাদের অন্তরাত্মাকে। কতক্ষণ কতদিন...।
তনুর হিজাবে ঢাকা মুখাবয়বে তনুর মিষ্ঠি আভা আলো ছড়াচ্ছে। সবাই এ ঘৃণ্য হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছে। পুরুষত্ব জাহির করা নেকড়েদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার দেশবাসী।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ অথুনা থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনু গত রোববার সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বের হন।
রাত গড়িয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তা পরিবারের সদস্যরা। রাতে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন কালভার্টের পাশে ঝোপের মধ্যে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। মেয়ের লাশ দেখে দুনিয়ায় থেকেও যেন নেই তার বাবা। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এসময় সেখানকার বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে।
সোহাগী জাহান তনু নেই, আছে শুধু তার স্মৃতি। বেঁচে আছে তার ফেসবুক পেজ আর সেখানে আপলোড করা নানা ছবি ও ভিডিও। সেখানেই পাওয়া গেল তনুর একটি ভিডিও, যেখানে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী সেই ছাত্রীটি। তনুর শেষ আপলোড করা ছবিগুলোর নিচে এখন শুধু বিদায়ের সুর।
তনু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ঝড় উঠেছে। ৬দিন হলেও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বিভিন্ন তরফে নিন্দা জানানো হচ্ছে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। ফেসবুকেও তারকারা নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
২৫ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম