শনিবার, ০২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৫৬:৩১

তনু হত্যা, দৌড়ে পালানো তিন যুবককে খুঁজছে তদন্ত টিম

তনু হত্যা, দৌড়ে পালানো তিন যুবককে খুঁজছে তদন্ত টিম

কুমিল্লা : রাত তখন ১০টার বেশি।  তনু বাসায় ফিরেনি।  তাকে খুঁজছিলেন তার পিতা ইয়ার হোসেনসহ অন্যরা।  এ সময় অলিপুর কালো ট্যাংকির পাশের সড়ক দিয়ে দ্রুত যাচ্ছিলেন তিন যুবক।  কিছুক্ষণ পরে ওই সড়কের পাশেই পাওয়া যায় তনুর লাশ।  

চাঞ্চল্যকর তনু হত্যার ঘটনায় ওই যুবকদের দিকেই সন্দেহের আঙুল ইয়ার হোসেনের।  ওই তিন যুবক কারা তা জানেন না ইয়ার হোসেন।  তিনি জানান, তারা তিনজন দৌড়ে যাচ্ছিল।  বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।  

ওই সময়ে একজন সৈনিককে যেতে দেখেন।  ইয়ার হোসেন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই ছেলেরা কারা?’ জবাবে ওই সৈনিক জানিয়েছিলেন, তারা এ এলাকারই’।  এ ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে তনুকে খুঁজতে গিয়ে কালভার্টের ওই স্থানে ক্লান্ত হয়ে বসেছিলেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।  

তখন সেখানে কোনো শব্দ পাননি তিনি।  ওই তিন যুবককে খুঁজছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।  গতকাল সেনানিবাস এলাকায় গিয়েছিল সিআইডির একটি টিম। যে স্থানে লাশ পাওয়া গেছে ওই স্থান পরিদর্শন করেন তারা।  তনু প্রাইভেট পড়াতেন ওই দুই বাসার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা।

সূত্রে জানা গেছে, সার্জেন্ট জাহিদ ও কর্পোরাল জাহিদ নামে দুজনের বাসায় টিউশনি করতেন তনু।  দুটি বাসায়ই পাশাপাশি।  ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে সার্জেন্ট জাহিদের বাসা থেকে তনু বের হয়ে যান বলে জাহিদের স্ত্রী জানিয়েছেন।

তার আগে কর্পোরাল জাহিদের বাসায় প্রাইভেট পড়ান তিনি।  ওই দুটি বাসা থেকে তনুদের টিনেশড কোয়ার্টার এক কিলোমিটার দূরে।  মধ্য স্থানে ঘটনাস্থল।  তনুর বাসা থেকে অর্ধকিলোমিটার প্রায়।  ঘটনাস্থলের ৭০ গজ দূরেই রয়েছে বিভিন্ন বাসা।  

এর মধ্যে একটি নির্মাণাধীন টিনশেড ঘর।  ওই ঘরে ওইদিন দুজন শ্রমিক রাত্রী যাপন করেছেন।  তারা সেনানিবাসে কাঁটাতারের বেড়ার কাজ করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই শ্রমিক জানিয়েছেন ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে তারা ঘুমিয়ে যান।  কোনো শব্দ শুনতে পাননি।

সংরক্ষিত ওই এলাকায় নিয়মিত টহল দেয় মিলিটারি পুলিশ (এমপি)।  সে রাতেও টহল ছিল।  কিন্তু টহলকারী মিলিটারি পুলিশও তনুকে দেখতে পাননি। ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যে তিন যুবক দ্রুত যাচ্ছিলেন তাদের স্পষ্ট দেখতে পাননি তনুর পিতা ইয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, জায়গাটা আবছা অন্ধকার ছিল।  লাইট পোস্টটি ছিল নিভু নিভু অবস্থায়।  ক্লিয়ার দেখা যায় না।  ওই তিন যুবক চলে যাওয়ার পর কালো ট্যাংকির কালভার্টের পাশে সড়ক থেকে সাত-আট গজ দূরে ঝোপে তনুর লাশ দেখতে পান ইয়ার হোসেন।

পাহাড়ের নিচে ঝোপের মধ্যে উত্তরে মাথা ও দক্ষিণে ছিল তনুর দুটি পা। নাকে ও দুই কানে ছিল জমাট রক্ত।  ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল স্যান্ডেল, ব্যাগ, মোবাইল ফোন।

সেনানিবাসের ওই স্থানে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। সাধারণ লোকজনের ওই এলাকায় প্রবেশের সুযোগ নেই।  সেনানিবাসের প্রধান গেটের পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রম মহাসড়ক।  

তারপরেই পশ্চিমদিকে সেনানিবাসের নাজিরাবাজার গেইট।  গেইটে এমপি চেকপোস্ট।  দায়িত্ব পালন করেন চারজন মিলিটারি পুলিশ (এমপি)।  রাস্তার ওপারে উত্তরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল।  

নাজিরবাজার গেইট হয়ে সেনানিবাসের দক্ষিণ দিকে পাকা সড়ক দিয়ে রূপসাগর, করিমাবাদ ও অলিপুর, বুধইর এলাকা।  সেনানিবাসের পুরো এলাকা সেখানে দেয়াল ঘেরা।  ওই এলাকায় সেনাপল্লী ও করিমাবাদ স্কুল গেইটেও থাকে সেনা প্রহরা।

সেনানিবাসের অলিপুরে আছে ভবন।  অলিপুর রোড থেকে ধানিজমি, কাদা পেরিয়ে কাঁটাতার।  তারপর সেনানিবাসের ওই ভবনগুলো।  সেখান থেকে আরো ভেতরে অলিপুর কালোট্যাংকি এলাকা।  আশপাশের লোকজন জানান, বাইরে থেকে সেনানিবাসে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।  স্থানীয় বাসিন্দারাও তাই বলেছেন।

এদিকে তনু হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো অন্ধকারে।  এ ঘটনার শুরু থেকেই ছায়া তদন্ত করছিল সিআইডি।  ডিবি থেকে মামলাটি গত ২৫ মার্চ সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।  

গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলার নথিপত্র পেয়েছেন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিম।  তিনি জানান, নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর গতকাল তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  

সিআইডির সিনিয়র এএসপি জালাল আহমদের নেতৃত্বে ওই টিমে ছিলেন এএসপি মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক শাহনাজ, গাজী মো. ইব্রাহিম ও চারজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)।  দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তারা।

গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুর কালো ট্যাংকি এলাকা থেকে সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়।  তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।  তার পিতা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক।  পরিবারের সঙ্গে সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় থাকতেন। -এমজমিন
২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে