রবিবার, ০৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৩৪:২৪

তনুর ভাইয়ের বন্ধু সোহাগ ৫ দিন ধরে নিখোঁজ!

তনুর ভাইয়ের বন্ধু সোহাগ ৫ দিন ধরে নিখোঁজ!

কুমিল্লা : কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতর মেধাবী কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করায় তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগকে র‌্যাব ৫ দিন ধরে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে গতকাল তনুর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের আবারও সিআইডির কুমিল্লা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগ (২০) পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তার বাবা নুরুল ইসলাম দাবি করেছেন, সোহাগ র‌্যাবের হাতে আটক আছে। তিনি গতকাল কুমিল্লা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রাতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে সোহাগকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি ৩০ মার্চ বুড়িচং থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, তনু হত্যার খবর টিভিতে দেখে তনুর ভাই তার বন্ধু দাবি করে তাকে ফোন দিয়েছিল সোহাগ। তখন তনুর ভাইয়ের ফোন বন্ধ ছিল। এরপর এলাকায় তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ সংঘটিত করে সোহাগ। এসব অভিযোগেই তার ছেলেকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে আমাদের আশপাশের এলাকার অনেক যুবককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তাদের অনেককেই আবার ছেড়েও দেয়। কিন্তু সোহাগকে ফেরত না দেওয়ায় তিন দিন পর বুড়িচং থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

তিনি পুলিশ সুপার, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কেউ তার ছেলের বিষয়ে খোঁজ দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে র‌্যাব-১১ কুমিল্লা ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ এর অধিনায়ক মেজর খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা তনুর ঘটনায় সোহাগ নামে কাউকে আটক করিনি’। এ ছাড়া বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে সোহাগের বাবা সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়রিতে তনু হত্যায় র‌্যাব আটক করেছে এমন কথা উল্লেখ করেননি।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের গতকাল সিআইডির কুমিল্লা কার‌্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর মরদেহ পড়ে থাকার স্থানটি পরিদর্শন শেষে ঢাকা ও কুমিল্লার সিআইডি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। এর আগে ঘটনাস্থলের পাশের গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

সিআইডি কুমিল্লার একটি সূত্র জানায়, সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দের নেতৃত্বে দলটি সেনানিবাস এলাকায় তনুর মরদেহ উদ্ধারের স্থানসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এই দলে রয়েছেন ঢাকা থেকে আগত সিআইডির দুজন সিনিয়র এসপি, কুমিল্লা সিআইডির সিনিয়র এসপি ড. নাজমুল করিম খান, কুমিল্লার সিনিয়র এএসপি জালাল উদ্দিন আহমেদ, এএসপি মোজাম্মেল হক, ইন্সপেক্টর শাহনেওয়াজ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী ইব্রাহীমসহ সিআইডির আরও কয়েকজন সদস্য। তারা সকাল ৯টায় সেনানিবাসে যান। দুপুর পর্যন্ত দলটি সেখানে অবস্থান করেন।

পরে বেলা ৩টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসা থেকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাতো বোন লাইজু জাহানকে সিআইডি কুমিল্লা দফতরে নেওয়া হয়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ অফিসার্স মেস সঞ্চিতার ফটকে এ ব্যাপারে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান।

তিনি বলেন, তদন্তের অনেক কাজ রয়েছে। সব দিক দেখতে হয়। সকাল থেকে আমরা ঘটনাস্থল দেখেছি। সব বিষয় দেখে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হচ্ছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি মাত্র। তনুর মা-বাবাকে আমাদের দফতরে এনেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তাদের বারবার জিজ্ঞেস করা হবে। কোনো কিছু বাদ গেল কিনা। একেক সময় একেকটা বলবেন, এরপরে আরও কিছু বলবেন। এভাবেই আমাদের কথা বলতে হবে।

একই সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহ্হার আকন্দ বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। এর বাইরে আর কিছু বলা যাবে না। গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের জঙ্গলে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ গত ১৩ দিনেও আলোচিত এই মামলার কোনো কিনারা করতে পারেনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে নানা কর্মসূচি অব্যাহত আছে। ৩০ মার্চ সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে গতকালের এ সংক্রান্ত সংবাদে ৩০ ও ৩১ মার্চের বদলে ভুলবশত এপ্রিল ছাপা হয়েছিল। এদিকে তনুর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। -বিডি প্রতিদিন

৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে