কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্রী ফারহানা আক্তারকে সম্প্রতি হত্যার শিকার হওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর মতো করে লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে একই বিভাগের কয়েকজন ছাত্র। গত বুধবার বিভাগের ক্লাসরুমে ওই ছাত্রীকে এ হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে ওই ছাত্রী কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায় তা দেখে নেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। হুমকিপ্রাপ্ত ফারহানা আক্তার অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্রী। হুমকিদাতা রাফিউল আলম দীপ্ত, জুনায়েদ আহমেদ ও মনজুরুল ইসলাম একই বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র। নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে এ ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা এবং বিভাগীয় প্রধানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই ছাত্রী। স্মারকলিপিতে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘গত ২৭শে এপ্রিল বুধবার নিজ বিভাগের শ্রেণিকক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে দলগত অধ্যয়ন করতেছিলাম। এ সময় অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল আলম দীপ্ত ও জুনায়েদ আহমেদ আমাকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তারা এতই অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করে যে, তা শুনে আমি স্থবির হয়ে যাই। এ সময় তারা আমাকে সম্প্রতি হত্যার শিকার হওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর মতো অবস্থা করে লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এবং আমি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাই তা দেখে নেয়ারও হুমকি দেয়। রাফিউল আলম দীপ্ত এ সময় বলে, আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দশটা লাশ ফেললেও আমাকে কিছু বলবে এমন কেউ নেই। এ সময় তাদের বন্ধু মনজুরুল ইসলাম মিঠুনও তাদের সঙ্গে ছিল। তারা পূর্বে আমার সাথে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে বাকবিতণ্ডা করেছিল। তখন আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এর জের ধরে তারা আমার সাথে এরূপ ব্যবহার করে। এ বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষদ ভবনে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এরূপ ব্যবহার খুবই লজ্জাজনক। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই হতাশ। আমি দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের বিচারের দাবি জানাই।’ এ বিষয়ে জানতে রাফিউল আলম দীপ্তর মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বন্ধু জুনায়েদ আহমেদ ও মনজুরুল ইসলাম মিঠুন বলেন, ফারহানা বিভিন্ন সময় আমাদের খারাপ বলেছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলাম। তখন মাথা গরম ছিল তাই তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে দু-একটা খারাপ কথা বলে ফেলেছি। তবে তনুর মতো অবস্থা করে লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দিইনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব উভয়পক্ষকে ডেকে সমাধান (মিলিয়ে দেয়ার) করার চেষ্টা করছিলেন। গত বছরও একই বিভাগের এক ছাত্র অপর এক ছাত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিল। তখনও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উভয়পক্ষকে মিলিয়ে দেয়া হয়েছিল।-মানবজমিন
২৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ