লক্ষ্মীপুর : দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাসি ফুটেছে মেঘনা পাড়ের জেলেদের মুখে। নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর গোটা উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার জেলে পরিবারে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদারসহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা। জেলার বৃহত্তম মতিরহাট মাছ ঘাটে ২৪ ঘণ্টাই বেচাকেনা চলছে ইলিশের। দাম কম হওয়ায় স্বস্তিতে ক্রেতারাও।
কমলনগর উপজেলার মেঘনা পাড়ের মতিরহাট ঘাটটি বর্তমানে বৃহত্তম নোয়াখালীর ইলিশ বেচাকেনার সবচেয়ে বড় ঘাট। প্রতিদিন দেশের প্রায় ৪০ জেলার জেলে, ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে মুখরিত থাকে এ ঘাট। যেখানে ইলিশ মৌসুমে প্রতিমাসে কমপক্ষে দেড়শ কোটি টাকার ইলিশ হাতবদল হয়ে থাকে।
ঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশের আকারও বেশ বড়। এখন পাঁচশ গ্রাম সাইজের প্রতি হালি (৪টি) ইলিশের সর্বোচ্চ দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, এক কেজি সাইজের প্রতি হালি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা, জাটকার কেজি ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অক্টোবর মাস থেকেই ২৪ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই এ সুযোগে যে যা পারছে ইলিশ কিনে মজুদ করছে। দাম নাগালে থাকায় ইলিশ কিনে খুশি সাধারণ মানুষ।
শুধু মতিরহাট নয় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতির মেঘনাপাড়ের ৬০ কি.মি. এলাকার আরও ১০টি ঘাটে ইলিশ বেচাকেনার একই চিত্র। সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট, কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, বাত্তিরঘাট, কটরিয়া, লুধুয়া-ফলকন, রামগতি উপজেলার রামগতি ঘাট, টাংকীর ঘাট, আলেকজান্ডার সেন্টার খাল, রায়পুরের চরবংশী এবং চর আবাবিলের ঘাটে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়। আবার লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৩০টি মাছঘাটে জেলেরা মাছ বিক্রি করছেন। মেঘনা নদীর মাছের ওপর নির্ভরশীল সরকারি তালিকায় ৩৬ হাজার ৭০০ জেলে থাকলেও নদী ও মাছ নির্ভরশীল জেলের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার হবে বলে দাবি জেলে কমিউনিটির।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের জেলেরা এখন ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। কিছুদিন আগে নদীতে ইলিশের আকাল থাকলেও বর্তমানে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় তারা ভীষণ খুশি। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর উপকূলের হাজার হাজার জেলে এবং ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বরফকল ও আড়তের শ্রমিকরাও।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মজুচৌধুরীর হাট মাছঘাটের জেলে ফোরকান আলীর। তিনি বলেন, ‘নদীতে অহন মেলা মাছ, আল্লাহ হারাবছর এরম রাখলে আমাগো আর অভাব থাকবো না।’
এখানকার আড়তদার হারুন ব্যাপারী জানান, মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় আনন্দের কমতি নেই। এভাবে চলতে থাকলে সবার ভাগ্য বদলে যাবে। বর্তমানে মাছের দর উঠা-নামা করছে। ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে এক পন (৮০টা) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে। মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের আশা, নদীতে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে গত বছরের দেনা পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন তারা।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জাটকা নিধন প্রতিরোধের কারণে এবার মাছের আকার বড় হয়েছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও জেলেদের পুর্নবাসনসহ মৎস্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাটকা আহরণ পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে ইলিশের সেই সোনালী দিন আবার ফিরে আসবে। -বাংলা ট্রিবিউন।
২১সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম