সাইদুল ইসলাম পাবেল, লক্ষ্মীপুর থেকে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে মেঘনা উপকূলীয় এলাকা লক্ষ্মীপুরেও। সংসদীয় চারটি (২৭৪, ২৭৫, ২৭৫ ও ২৭৬) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। মনোনয়ন পেতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ৫৪ প্রার্থী তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রেও তৎপরতা বাড়িয়েছেন।
এ জেলায় প্রবীণ প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপেক্ষাকৃত নবীণ প্রার্থীও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর পাশাপাশি রয়েছে একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতাও। তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি, জাসদ, জামায়াত ও ইসলামী অন্দোলনের প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। অন্যান্য ছোটখাটো দলের তেমন তৎপরতা নেই। বিগত ঈদুল ফিতরকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুভেচ্ছা বার্তাসহ নানা সামাজিক কাছে নিজেদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নিজের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। সামনের ঈদুল আজহাকে ঘিরেও প্রার্থীরা ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করছেন। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী প্রার্থী হওয়ায় আগামী নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হওয়ারও আভাস পাওয়া গেছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিপদে আপদে সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও আর্থিক সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের সঙ্গেও নতুন করে যোগাযোগ বাড়ানোর তৎপরতা রয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে।
এদিকে এ চারটি আসনে ২০১৪ সালের আগে ভোটে বিএনপি-জামায়াত জোটের শক্ত অবস্থান থাকলেও বর্তমান সরকার আমলে ইউপি, উপজেলা ও পৌর নির্বাচনের হানা দিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বিএনপিতে দলীয় কোন্দলও বেড়েছে। তারপরও বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে চারটি আসনই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) : এ আসনে বর্তমান এমপি বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম আওয়াল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তবে আগামীতে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এম এ মোমিন পাটোয়ারী, রামগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ মো. শাহজাহান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু ও জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও বিএনপির উপজেলা সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা— জাসাসের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুন হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীরও শক্ত প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে অবস্থান রয়েছে। এ ছাড়াও বিএনপির সহ-সভাপতি মনির আহমদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ ও স্থানীয় নেতা আবদুর রহীম (ভিপি)ও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ আসনে ২০ দলীয় জোটের শক্ত ও জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন এলডিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। এ ছাড়াও জামায়াতের উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা আমিনুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সদস্য সচিব মো. বেলাল হোসেন, জাসদের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক এমপি এম এ গোফরান এবং ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সহ-সভাপতি ডা. রফিক উল্লাহও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) : এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. নোমান। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন। তবে আগামীতে ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও আমরা ক’জন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম পাপুল, ডা. জগলুল আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুনুর রশিদ ও শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া। সাবেক এই ছাত্রনেতা নিয়মিত এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ ও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঞ্জুর এলাহীও মনোনয়ন প্রত্যাশী। জামায়াতের জেলা আমির মাস্টার রুহুল আমিন ভূইয়াও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া জেএসডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ এম এ ইউছুপ ও ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সহ-সভাপতি মাস্টার শাহজাহান নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা এ কে এম শাহজাহান কামাল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর ছাত্তার, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবু তাহের, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপুও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুও মনোনয়ন চাইবেন। তারও শক্ত অবস্থান রয়েছে এলাকায়। এ আসনে দলের সবুজ সংকেত না পেলে লক্ষ্মীপুর-২ ও তার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এম আর মাসুদ, জেএসডির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল, জামায়াতের বায়োফার্মার এমডি ডা. আনোয়ারুল আজিম এবং ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি অনারারী ক্যাপ্টেন (অব) মো. ইব্রাহীমও নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন ও কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলীর মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধ হবে। দুই নেতা-নেত্রীরই এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় সবুজ সংকেতের জন্য তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রেও তারা যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপি থেকে এ আসনে প্রার্থী বদল হতে পারে। তবে সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফউদ্দিন নিজানও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
তবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবু। কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে সবুজ সংকেত নিয়েই তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতা হারুন-অর-রশীদও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডি সভাপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক আ স ম আবদুর রব। তিনি নিয়মিত এলাকায় খোঁজখবর রাখছেন।
এ ছাড়া বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান, জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শিহাব উদ্দিন, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলনের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আ হ ম নোমান সিরাজী নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি