লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আফজল গ্রামে পুকুর খনন করতে গিয়ে ২শ' বছরের পুরানো এক বিশাল জাহাজের সন্ধান মিলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শ্রমিকেরা মাটি কাটার একপর্যায়ে কৌতূহলী ওই 'জাহাজের মাস্তুলের' দেখা পায় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রায় দেড়-দুশ' বছর আগে নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ। কেউ কেউ ধারণা করছেন পর্তুগিজদের ব্যবহৃত জাহাজ। এতে ধনরত্ন ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। মাটি খুঁড়ে জাহাজ পাওয়ার খবর লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ায় কৌতূহলী লোকজন দেখতে ভিড় করছেন প্রতিদিন।
জানা যায়, সম্প্রতি নদী ভাঙা এক কৃষক পরিবার চর আফজল গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন। নিজ পরিবারের ব্যবহারের জন্য জমির মালিক মাহফুজ বসত ঘরের পাশে পুকুর খনন করছিলেন। খননের এক পর্যায়ে দেখা মেলে জাহাজের মাস্তুলের। মুহূর্তে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে।
জমির মালিক মাহফুজের ছেলে হেলাল জানান, পুকুর খননে ১০/১২ফুট গভীরে গেলে জাহাজের মাস্তুল দেখতে পাওয়া যায়। যে কারণে পুকুর খনন শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে, আরও নিশ্চিত হতে এলাকার লোকজন টিউবওয়েল মিস্ত্রি দিয়ে পাইপ বোরিং করায় ঘটনাস্থলে। আশে-পাশের দুই-তিনশ' ফুট এলাকা জুড়েও বোরিং করানো হয়। তাতে দেখা যায় ১২-১৪ ফুট গভীরে গেলে পাইপ আটকা পড়ে। একইভাবে বেশ কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বোরিং করে এলাকার লোকজন নিশ্চিত হয়েছেন এটি বিশাল আকৃতির 'জাহাজ'। পরে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটতে না পারায় জমির মালিক পুকুর খনন কাজ বন্ধ রেখেছেন। লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে জাহাজের মাস্তুল দেখতে ভিড় করছেন। দেখতে আসা লোকজন মোবাইলে ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে স্থানীয় বিবিকে পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রায় দেড়/দুই শ' বছর আগে নদী থেকে জেগে উঠে চর রমিজ ইউনিয়ন। পরবর্তীতে ফসল আবাদ ও বসতি গড়ে উঠে। তার আগে এই চরসহ রামগতি উপজেলা বিশাল অংশ ছিলো উত্তাল নদী।বঙ্গোপসাগর সংযুক্ত এই নদী ছিলো বিশাল বিস্তৃত। এই রুটে চলাচল করতো বড় বড় জাহাজ। পর্তুগিজদেরও এই পথে যাতায়াত ছিলো। সেই সময়ের ডুবে যাওয়া জাহাজ হতে পারে এটি।
এলাকার প্রবীণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তাল নদীতে পলি জমে চরে রূপান্তরিত হয় এই এলাকা। এতে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি। এখন মাটি কেটে পুকুর খনন করায় সেই ডুবে যাওয়া জাহাজের সন্ধান পাওয়া যায়। চর আফজল গ্রামের বাসিন্দারাসহ উৎসুক লোকজনের ধারণা, জাহাজটি পর্তুগিজদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় জাহাজটি নদীতে ডুবে গেছে। পরবর্তীতে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই জাহাজে মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। এসব ধারণা ও আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কৌতূহলী মানুষের মধ্যে জাহাজ দেখতে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছেন চর আফজল গ্রামে।
নোয়াখালীর সূবর্ণ চর উপজেলা থেকে আসা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র শরীফ ও আকবর জানান, খবর পেয়ে তারা জাহাজ দেখতে এসেছেন। তারা মনে করেন বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরে আনা জরুরি। গবেষণায় জানা যাবে, এটি কি এবং এর রহস্য ও ইতিহাস।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস