রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৫৭:১৫

নিখোঁজ শোনার পর তাজউদ্দিনের মায়ের জিডি

নিখোঁজ শোনার পর তাজউদ্দিনের মায়ের জিডি

লক্ষ্মীপুর : নিখোঁজ শোনার পর লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন কাউসারের সন্ধানে থানায় জিডি করেছেন তার মা

গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা আসে, তার একজন লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিন কাউসার।
 
লক্ষ্মীপুর সদর থানায় শনিবার রাতে সাধারণ ডায়েরি করার পর স্কুলশিক্ষক তাহেরা বেগম দাবি করেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে তাজউদ্দিন যে নিখোঁজ তা তিনি এতদিন জানতেন না।  গণমাধ্যমে খবর দেখে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন।

গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন বেশ আগে থেকেই পরিবারের কাছে নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ্য হওয়ার পর আরো ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

তাতে লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিনের (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮) নাম ছিল।  ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো এই যুবক ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিল বলে জানায় তার পরিবার।

তাহেরা বেগম রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখে চলে যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তাজউদ্দিনের বাবা রেলের সাবেক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া মারা যান।  তখন চেষ্টা করেও এ মৃত্যুর খবর ছেলেকে জানাতে পারেননি তাহেরা।

তার প্রায় এক বছর পর তাজউদ্দিন অপরিচিত নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করলে বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন বলে তার মা জানান।

তাহেরা বলেন, দেশে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছিল সে।  রমজানের কয়েকদিন আগে সে বাড়িতে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলে এবং আমার শারীরিক অবস্থার খবর নেয়।

এরপর আর কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় তাজউদ্দিনের নিখোঁজ থাকার তথ্য গণমাধ্যমে দেখে থানায় জিডি করেন বলে জানান তিনি।

তাহেরা বলেন, তাজউদ্দিন ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এক তরুণীকে বিয়ে করার পর সে দেশের নাগরিকত্ব পায়।  ওই তরুণী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করে বলে  জেনেছেন তিনি।  ২০১০ ও ২০১২ সালে তাদের দুই ছেলেমেয়ের জন্ম হয়।

তাজউদ্দিনের বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান।

তিনি বলেন, সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন।  এখন কোথায় রয়েছে তা আমাদের জানা নেই।  তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি।

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের আটিয়াতলী গ্রামে তাজউদ্দিনের বাড়ি।  সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহেরার চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় তাজউদ্দিন।

১৯৮১ সালের ১ মার্চ জন্ম নেয়া তাজউদ্দিন বাড়ির পাশে আটিয়াতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

এরপর ১৯৯৯ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ঢাকার অামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে বিএসসি ডিগ্রি নেয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তিনি।

তাহেরা বলেন, নিউ সাউথওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানিতে চাকরি নেয় সে।

তাজউদ্দিন খুব লাজুক ও মেধাবী ছিল বলে জানা যায়।
গুলশানে হামলায় নিখোঁজ তরুণদের জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর শোলাকিয়া ঈদ জামাতের সময় পুলিশের ওপর হামলার পর নিহত এক তরুণও নিখোঁজ ছিলেন।

তরুণদের পরিবার তা আঁচ করতে পারেননি যে, তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়েছে।    
১০ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে