বেলাল রিজভী, মাদারীপুর থেকে : দিনক্ষণ নির্ধারিত না হলেও এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া বইছে মাদারীপুরে। সংসদীয় ২১৮, ২১৯ ও ২২০ নম্বর আসনে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে এ জেলায় প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব চরমে।
এ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রায় সব প্রার্থীই অপেক্ষাকৃত প্রবীণ। বিপরীতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তরুণ। তবে সবার দৃষ্টি মাদারীপুর-৩ আসনের দিকে। সেখানে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ আসনে তিন ভাগে বিভক্ত।
মাদারীপুরে এখন চায়ের কাপে ঝড় বইছে— এ আসনে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক। এর মধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবারের নির্বাচিত এমপি। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে গত রমজানে ইফতার পার্টি, ঈদুল ফিতরসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন।
অনেকেই পোস্টার ও ব্যানার বানিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে জানান দিচ্ছেন, একাদশ নির্বাচনের খুব একটা বাকি নেই। ভোটাররা বলছেন, মাদারীপুরের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। এখানে বিএনপির প্রার্থীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। এর পরও প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এই দলের সাংগঠনিক কাঠামোও তেমন শক্তিশালী নয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই মাদারীপুরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রুপিং চলে আসছে। সম্প্রতি দুই গ্রুপ তুচ্ছ ঘটনার জেরে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে নামে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
অন্যদিকে বিএনপির জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে জেলা যুবদল সভাপতি মিজানুর রহমান মুরাদ। এ জেলায় জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর কিছু ভোটব্যাংক রয়েছে। সে তুলনায় বাম দলগুলো সক্রিয় নয়।
মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একক প্রার্থী নূর ই আলম চৌধুরী লিটন। তিনি টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। এলাকার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন শিবচর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাহান্দার গ্রুপের নেতা ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান।
তিনি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক মামলার আসামিও। নিয়মিত এলাকার নেতা-কর্মীদের খোঁজখবরও রাখছেন তিনি। এ ছাড়া বিএনপি নেতা কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লাও শক্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি মুরাদ গ্রুপের নেতা হিসেবে জেলা বিএনপিতে পরিচিত। এ ছাড়া নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি আবদুল হান্নান মিয়া ও বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী।
মাদারীপুর-২ (সদরের একাংশ-রাজৈর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহেই মাদারীপুরে আসা-যাওয়া করেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নেন। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
এ ছাড়া দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন মোল্লা ও সহসভাপতি গোলাম মাওলা। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি ও সাবেক ছাত্রনেত্রী হেলেন জেরিন খান। তিনি মহিলা দলের কেন্দ্রীয় এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন সরোয়ার হোসেন মোল্লাও। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান কাওছার হাওলাদার এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা মিল্টন বৈদ্যও তত্পরতা চালাচ্ছেন।
মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ-কালকিনি) আসনে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা হলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি এলাকায় এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন। এ ছাড়া শক্ত প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ। নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মীর গোলাম ফারুকও তত্পরতা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুকও ‘শক্ত’ প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান আজাদও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি