মাদারীপুর থেকে : পরিবার পেল সেই নবজাতক কন্যাশিশুটি। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটিকে দত্তক নিলেন চট্টগ্রামের এক সরকারি কর্মকর্তা। শনিবার রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি শিশুটির দায়িত্ব নেন। তবে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া দম্পতি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তাঁদের নাম প্রকাশ ও ছবি না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত বুধবার ভোররাতে শিবচর উপজেলার হাতিরবাগান বালুর মাঠে জন্ম হয় কন্যাশিশুটির। শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। নাম তাঁর সালমা বেগম (৩৫)। তিনি জানেন না তাঁর স্বামী পরিচয়। ওই নারীর গর্ভে ভূমিষ্ঠ পিতৃপরিচয়হীন কন্যাশিশুটিকে দেখে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ও প্রতিবেশীরা তাঁদের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে থানা-পুলিশ করেও মেলেনি কোনো পরিচয়।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ‘নবজাতক কন্যাশিশুটির কী হবে?’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিবচরের পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন বহু দম্পতি।
শিবচর থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, শিশুটির দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তবে প্রশাসন নানা দিক চিন্তাভাবনা করে কন্যাশিশুটির ভবিষ্যৎ ও তার মায়ের চিকিৎসার কথা বিবেচনায় রেখে উচ্চবিত্ত পরিবারের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে চট্টগ্রামের এক নিঃসন্তান সরকারি কর্মকর্তা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আসেন।
শিবচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই অনেকেই আমার কাছে ফোন করে বাচ্চাটির দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তবে আমরা চেয়েছি শিশুটির বাবাকে খুঁজে বের করতে। তাই অনেক এলাকায় খোঁজও নিয়েছি।
অবশেষে সঠিক কোনো খবর না পেয়ে চট্টগ্রামের নিঃসন্তান এক সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের সন্তান হিসেবে বাচ্চাটির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললে আমরা ওই দম্পতির কাছে শিশুটিকে তুলে দিই। এ ছাড়া স্থানীয় শামীম নামে এক ব্যাংকার ওই ভারসাম্যহীন নারীকে ঢাকা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ব্যাপারে দায়িত্ব নেন।
কন্যাশিশুটির দায়িত্ব নেওয়া দম্পতি বলেন, ‘আমার পরিবারে সব আছে। কিন্তু আমাদের সংসারে আলো নেই। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পরেও কোনো সন্তানের বাবা হতে পারিনি। তবে এবার এই সন্তানের বাবা হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সন্তানকে কোলে তুলে নিয়েছি। কিছুদিন পর সে আমাকে বাবা বলে ডাকবে। ওর মাকে মা বলবে। আমাদের স্বপ্ন তাকে মানুষের মতো মানুষ করার। কখনই বুঝতে দেব না তার ফেলে আসা করুণ এই দিনের কথা।’
শিবচর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) মো. জাফর মিয়া বলেন, স্থানীয় লোকজন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ও তার সন্তানকে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। তিন দিন চিকিৎসা শেষে গতকাল (শনিবার) বিকেলে সুস্থ অবস্থায় মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। --প্রথম আলো
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস