মাদারীপুর থেকে: ফুপাতো ভাই সেজে মাদারীপুরের শিবচরে স্ত্রীর বিয়ে দিয়েছেন এক স্বামী। ফরিদপুরের ভাঙ্গার প্রতারক ওই স্বামী ও স্ত্রীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। প্রতারক নারীর এটি চতুর্থ বিয়ে বলে সে স্বীকার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীরা জানান, উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর গ্রামের পাঁচ সন্তানের জনক সোহরাব শেখের (৬০) স্ত্রী মারা যায় প্রায় এক বছর আগে। সন্তানদের কাছে সংসার ও নিজের খেয়াল রাখতে দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা পোষন করেন সোহরাব। প্রায় পনের দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিপাড়া ইউনিয়নের তোজাপুর গ্রামে সোহরাবের মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে আয়না বেগম (৪০) ভিক্ষা করতে যায়। আয়না নিজেকে নিঃসন্তান ও বিধবা বলে পরিচয় দেয়। এ কথা শুনে সোহরাবের মেয়ে ও মেয়ে জামাই আয়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে আয়না তাৎক্ষনিকভাবেই রাজি হয়ে যায়।
পরদিন আয়না তাদের সাথে শিবচরে সোহরাবের বাড়িতে বিয়ে বসতে আসে। কিন্তু গ্রামবাসী ওই মহিলার কোন আত্বীয়- স্বজন বা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করাতে আপত্তি তুলে। পরদিন ওই মহিলা ফুপাতো ভাই পরিচয়ে চাঁন মিয়া খানকে (৫০) সোহরাবের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে কাজী ডেকে বিধি সম্মতভাবে সোহরাব ও আয়নার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে দশ হাজার টাকা দেন মোহর ধার্য করা হয়। বিয়ের কাবিন নামায় আয়নার সাক্ষী ও অভিভাবক হিসেবে চাঁনমিয়া স্বাক্ষরও করে। সেখানে সে নিজেকে আয়নার ফুপাতো ভাই বলে উল্লেখ করে। এর পর ভালই কাটছিল আয়না ও সোহরাবের নতুন সংসার।
গত সোমবার চাঁনমিয়া সোহরাবকে ফোন করে বাড়িতে নতুন ধান ওঠার কথা বলে আয়নাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। সোহরাবও তাতে রাজি হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে চাঁনমিয়া আয়নাকে নিতে সোহরাবের বাড়িতে আসে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির লোকজনদের চাঁনমিয়া ও আয়নার আচার আচরণে সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী তাদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দুজনেই স্বীকার করে তারা স্বামী স্ত্রী।
পরে এলাকাবাসী গ্রাম পুলিশের সহায়তায় মঙ্গলবার গভীর রাতে এই দুই প্রতারক স্বামী-স্ত্রীকে থানায় সোপর্দ করে। প্রতারক আয়না ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিপাড়া ইউনিয়নের তোজাপুর গ্রামের মৃত আমের আলী মাতুব্বরের মেয়ে। এটি তার চতুর্থ বিয়ে ও দুই সন্তানের জননী বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। প্রতারক চাঁনমিয়া একই ইউনিয়নের পল্লীবেড়া গ্রামের মৃত হানিফ খানের ছেলে। আয়না ও চাঁনমিয়া উভয়েরই এটি তৃতীয় বিয়ে। এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে প্রতারণার শিকার সোহরাব শেখ বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলা দায়ের করেন। আটককৃতদের মাদারীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রতারণার শিকার সোহরাব শেখ বলেন, চাঁনমিয়া ফুপাতো ভাই পরিচয়ে কাবিননামায় সই দিয়ে আয়নার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন। কাল দেখি ওরা স্বামী-স্ত্রী। প্রতারণা করে ওরা আমার টাকা-পয়সা, সম্পদ লুট করে আমাকে মেরে ফেলতো বলে আমার ধারণা।
প্রতারক আয়না বলেন, এটি আমার চতুর্থ বিয়ে। প্রথম স্বামী নয় বছর আগে দুই বাচ্চা রেখে মারা যান। পরের জন বরিশালের সে দশদিন সংসার করে পালিয়ে গেছে। চাঁনমিয়ার সাথে বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। চাঁনমিয়া ফুপাতো ভাই সেজে সোহরাবের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন।
চাঁনমিয়া শেখ বলেন, আয়না সোহরাবকে বিয়ে করতে চায় তাই আমি ফুপাতো ভাই সেজে আয়নার বিয়ে দিয়েছি। আমরা ভুল করছি, আমাগো মাফ কইরা দেন।
পাঁচ্চর ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার ধারণা এরা প্রতারক চক্র। এরা নিজেরাই সব স্বীকার করেছে। প্রতারক না হলে এমন জঘন্য কাজ করা সম্ভব নয়।
শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাজাহান মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। উভয়ই দোষ স্বীকার করেছে। আসামিদের জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি