মাদারীপুর থেকে : ''একসঙ্গে থাকলাম। আমার কিছুই হলো না। কিন্তু বাবুটার কীভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। কোনোভাবেই কান্না থামে না তার। বাবুর কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না আমি। তার কান্না দেখে আমিও কাঁদছি। ওদিকে তার বাবার অবস্থাও ভালো না। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।''
কেঁদে কেঁদে এভাবেই কথাগুলো বললেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় করোনায় আক্রা'ন্ত তিন বছরের এক শিশুর মা। উপজেলার বাজিতপুর এলাকায় করোনায় আক্রা'ন্ত বাবার তিন বছরের শিশুরও করোনা পজেটিভ এসেছে। এর আগে আক্রা'ন্ত বাবাকে শনিবার রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পরে তার স্ত্রী ও তিন বছরের শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। পরে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়, তিন বছরের শিশুর করোনা পজেটিভ। তার মায়ের করোনা নেগেটিভ। বর্তমানে তারা সবাই রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তবে আক্রা'ন্ত শিশুটিকে নিয়ে বি'পাকে পড়েছেন চিকিৎসকরা। করোনা আক্রা'ন্তদের পৃথক ওয়ার্ডে রাখার কথা বলা হলেও শিশুটিকে রাখা যাচ্ছে না।
ফলে শিশুটির পাশে তার মা রয়েছেন। এতে করোনার ঝুঁ'কি রয়েছে শিশুটির মায়ের। জানতে চাইলে শিশুটির মা বলেন, জন্মের পর থেকে বাবুর ঠান্ডাজনিত অনেক সম'স্যা। দুই মাস আগে বাবুরে নিয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। একটু ঠান্ডা লাগলেই নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে ডাক্তার বললেন বাবুর করোনা।
তিনি বলেন, বাবুর বাবা করোনায় আক্রা'ন্ত হওয়ার পর হাসপাতালে আনা হয়। আমাদের একসঙ্গে নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি রুমে থাকছি আমরা। বাইর থেকে আমাদের রুমের দরজা লাগানো। বদ্ধঘরে সারাক্ষণ কাঁদে বাবু। কোনোভাবেই কান্না থামে না তার। করোনা জেনেও মাঝে মধ্যে কোলে নিই। তবুও কান্না থামে না। পাশের রুমে তার বাবা। সেখানেও নেয়া যাচ্ছে না। এভাবে পাঁচদিন ধরে বাবুরে নিয়ে বসে আছি। ফেলেও যেতে পারছি না, ও তো আমার বুকের ধন। কোথায় ফেলব।
কীভাবে করোনায় আক্রা'ন্ত হলেন শিশুটির বাবা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশুর বাবা ঢাকার কদমতলীর ফলের দোকানের কর্মচারী। ঢাকা থেকে করোনায় আক্রা'ন্ত হন। সেখান থেকে রাজৈরে নিজ গ্রামে আসেন। এলাকার লোকজনের বাধার কারণে অন্যের বাড়িতে অবস্থান নেয়। পরে একদিন গোপনে বাড়ি আসে। কারণ ঢাকায় থাকা অবস্থায় তার সম্পর্কে এলাকায় খবর আসে করোনায় আক্রা'ন্ত। পরে পরীক্ষা করালে তার করোনা ধ'রা পড়ে।
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, আগে শিশুটির বাবার করোনা পজেটিভ আসে। ১২ এপ্রিল শিশু ও তার মায়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে মায়ের করোনা নেগেটিভ এলেও শিশুটির পজেটিভ আসে। বর্তমানে তারা সবাই রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তবে আক্রা'ন্ত শিশুটিকে নিয়ে বি'পাকে পড়েছেন চিকিৎসকরা। করোনা আক্রা'ন্তদের পৃথক ওয়ার্ডে রাখার কথা বলা হলেও শিশুটিকে রাখা যাচ্ছে না। ফলে শিশুটির পাশে তার মা রয়েছেন। এতে করোনার ঝুঁ'কি রয়েছে শিশুটির মায়ের।
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিঠুন বিশ্বাস বলেন, রাজৈরের প্রথম করোনায় আক্রা'ন্ত ব্যক্তির স্ত্রী ও তিন বছরের শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। শিশুটির রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তার মায়ের নেগেটিভ এসেছে। পৃথক ওয়ার্ডে রাখার কথা থাকলেও শিশুটিকে রাখা যাচ্ছে না। শিশুটির পাশে তার মা রয়েছেন।