শিবচর (মাদারীপুর): দর্জি বাবা মৃত্যুর ৭ বছর পেরিয়েছে। দরিদ্র বাবার দেওয়া ইটের গাথুনির ঘরে সমর্থ্য হয়নি আর পলেস্তারা দেওয়ার। ডোয়াও রয়ে গেছে মাটির প্রলেপ। আষ্টেপৃষ্টে ঘেরা দারিদ্রতার মাঝে মায়ের সেদিকে খুব একটা খেয়ালও নেই। কারণ সংসারটাই চলে মেয়ে ও জামাইদের দেওয়া যৎসামান্য অর্থে। এরইমাঝে পরিবারটিতে আশার আলো হয়ে জ্ব'লে উঠেছে ছোট মেয়ে সুমাইয়া ফারহানা।
পরিবারের হাজারো অভাব অনটন পেছনে ফেলে বই খাতাসহ শিক্ষকদের সহায়তায় লেখাপড়া চালিয়ে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে শিবচরের পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া। ভাল কলেজে ভর্তির ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে সে আশায় ম্লান সুমাইয়া ও তার পরিবারের। পরিবারের এই ছোট মেয়েটির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ চান সকলের সহযোগিতার।
সরেজমিন জানা যায়, পেশায় দর্জি দেলোয়ার হোসেন শ্বশুরের দেওয়া জমিতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের সাড়ে এগার রশি লপ্তিকান্দি গ্রামে বসবাস শুরু করেন ৭ বছর আগে । সংসার চালাতে ঢাকার সাভার, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেঘুরে দর্জির কাজ করে কষ্টে চলছিল তাদের পরিবার। শিবচরে শ্বশুরের দেওয়া জমিতে প্রায় ৭ বছর আগে ঘর তোলার কাজ শুরু করেন তিনি। ঘর অসম্পূর্ন রেখেই শ্বাসকষ্টে দেলোয়ারের মৃ'ত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চারদিকে অন্ধকার দেখেন মা সালেহা বেগম। নিজে ঘরে বসে দর্জি কাজ শুরু করেন। বড় মেয়ে তাসলিমা কেজি স্কুলে চাকুরি করে মার সাথে সাথে সংসারের হাল ধরেন। মেয়ে জামাইদের আর্থিক সহায়তায় কোনমতে চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার। অর্থাভাবে ২ মেয়েকে বিয়ে দিতে হয় অল্প বয়সেই। ৬ মেয়ের সর্ব কনিষ্ঠ সুমাইয়া ফারহানা। আর্থিক অনটনের সংসারে সুমাইয়ার লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার সাহস প্রথমত অবস্থাতে না হলেও লেখাপড়ার প্রতি ওর প্রবল টান থাকায় বোনদের সহায়তায় লেখাপড়া চালিয়ে যায়।
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ গ্রহন করে সুমাইয়া। পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ গোল্ডেন অর্জন করে সে। সুমাইয়ার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। ডাক্তারতো অনেক দূরের কথা ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়েই রয়েছে দুশ্চিন্তা। সুমাইয়ার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পরিবারটি চায় সকলের সহযোগিতা।
মেধাবী সুমাইয়া বলেন, স্যারদের ও স্কুল কতৃপক্ষের সহায়তায়ই লেখাপড়া করতে পেরেছি। স্কুলে আমার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি উল্টো আমাকে বই খাতা প্রাইভেট ফ্রি পড়িয়েছে। আমি ডাক্তার হতে চাই। ভালো একটি কলেজে পড়তে ইচ্ছে করে । কিন্তু আমার পরিবারের সে সামর্থ্য নেই।
সুমাইয়ার মা সালেহা বেগম বলেন, ওর বাবা মা'রা যাওয়ার পর নিজেই দর্জির কাজ করেছি। এখন আর চোখে দেখি না। মেয়ে জামাইরা সংসার চালায়। সুমাইয়া পড়েছে সরকারের বৃত্তি ও স্যারদের দেওয়া বই খাতা ও সহায়তায়। এখনো সহায়তা না পেলে ওর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টের।
পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন, পরিবারটিতে কোন উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি না থাকায় অভাব অনটনেই চলে ওদের সংসার। কিন্তু সুমাইয়া অদম্য মেধাবী। তাই আমরা শুরু থেকেই সুমাইয়াকে বই খাতা প্রাইভেটসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করেছি। সুমাইয়া সুযোগ পেলে সমাজের দৃষ্টান্ত হবে।-কালের কণ্ঠ